চৈতন্যদেবের আবির্ভাবের ২ টি প্রধান কারণ
- বহিরঙ্গ কারণ
- অন্তরঙ্গ কারণ
১.
শ্রীচৈতন্যদেবের আবির্ভাব মধ্যযুগের বাংলাদেশে এক অতি স্মরণীয় ঘটনা। বৈষ্ণব ভক্তের দৃষ্টিতে তিনি স্বয়ং ভগবান– মানবমূর্তিতে তিনি আবির্ভূত হয়েছেন। ্সমসাময়িক তমসাচ্ছন্ন সমাজ থেকে মুক্তি লাভের জন্য অবশ্যম্ভাবী প্রয়োজন ছিল এমন এক ব্যক্তিত্বের যাঁর দ্বারা সামাজিক বিশৃঙ্খলা দূরীভূত হবে। চৈতন্যের আবির্ভাবে বাঙালি জাতি নব জীবনচেতনায় উদ্ভাসিত হয়েছিল।
পঞ্চদশ-ষোড়শ শতকের যে সময়ে চৈতন্যের আবির্ভাব সে সময় নবদ্বীপ তথা সারা বাংলা ধর্মের গ্লানিতে পরিপূর্ণ ছিল। কবিরাজ গোস্বামী লিখেছেন,
নিরবধি নৃত্য গীত বাদ্য কোলাহল।
না শুনি কৃষ্ণের নাম পরম মঙ্গল।।
[আদিখণ্ড]
— এরূপ বিশৃঙ্খল পটভূমিকায় দুষ্কৃতের বিনাশ সাধন ও ধর্ম সংস্থাপনের উদ্দেশ্যে স্বয়ং কৃষ্ণ যেন চৈতন্য রূপে নদিয়ায় অবতীর্ণ হলেন,
কলিযুগে যুগধর্ম নামের প্রচার।
তথি লাগি পীতবর্ণ চৈতন্যাবতার।।
[আদিখণ্ড]
যদিও গোস্বামীগণ চৈতন্যের আবির্ভাবের অন্য কারণ ব্যক্ত করেছেন। ভূ-ভার হরণের জন্য চৈতন্যদেবের আবির্ভাব আসলে বহিরঙ্গ কারণ, সামান্য কারণ-
প্রেমনাম প্রচারিতে এই অবতার।
সত্য এই হেতু কিন্তু এহ বহিরঙ্গ।।
[আদিখন্ড]
অর্থাৎ ভূ-ভার হরণ কিংবা প্রেমনাম প্রচার কোনোটিই চৈতন্যের আবির্ভাবের প্রকৃত কারণ নয়। তাহলে কী সেই প্রকৃত কারণ ???
২.
চৈতন্য দেবের আবির্ভাবের মূল কারণ সম্বন্ধে স্বরূপ দামোদর তাঁর ‘কড়চা’য় তিনটি কারণ নির্দেশ করেছেন। তা নিম্নরূপ,
শ্রীরাধায়াঃ প্রণয় মহিমা কীদৃশো বানয়ৈবা-
স্বাদ্যো যেনাদ্ভূত মধুরিমা কীদৃশো বা মদীয়ঃ ।
সৌখ্যং চাস্যা মদনুভবতঃ কীদৃশং বেতি লোভাৎ-
তদ্ভাবাঢ্যঃ সমজনি শচীগর্ভ সিন্ধৌ হরীন্দুঃ ।।
অর্থ- শ্রীরাধার প্রণয়মহিমা কীরূপ, শ্রীরাধা কর্তৃক আস্বাদ্য আমার অদ্ভূত মধুরিমাই বা কীরূপ, আমাকে অনুভব করে শ্রীরাধার সুখই বা কীরূপ — এরই লোভে শচীগর্ভরূপ সিন্ধুতে রাধাভাবযুক্ত গৌরাঙ্গের আবির্ভাব।
[ads id=”ads2″]
আমরা গৌরাঙ্গের আবির্ভাবের তিনটি কারণ লক্ষ করলাম, যথা-
১। রাধার প্রেমমহিমা কীরূপ তা জানবার ইচ্ছা
২। শ্রীরাধিকার আস্বাদিত শ্রীকৃষ্ণের মাধূর্য্য উপলব্ধির ইচ্ছা
৩। কৃষ্ণের মধুরিমা আস্বাদ করে রাধার সুখ কীরূপ তা জানবার ইচ্ছা।
উপর্যুক্ত তিনটি কারণে রাধিকার ভাবকান্তি অঙ্গীকার করে মর্ত্যে চৈতন্যদেবের আবির্ভাব ঘটেছে।
————————–
ঋণ – সনাতন গোস্বামী
————————–