প্রাচীন সাহিত্যের প্রবাদ-প্রবচনের ব্যবহারের উল্লেখ করতে গিয়ে সুশীলকুমার দে জানিয়েছেন,
প্রাচীন সাহিত্যের প্রবাদের যে যথেষ্ঠ প্রয়োগ রহিয়াছে, তাহার সযত্ন ও সবিস্তার আলোচনা না হইলে, এগুলির লোকপ্রিয়তা, ব্যবহারের পারম্পর্য ও প্রাচীন রূপ নির্ণয় করা যাইবে না। [বাংলাপ্রবাদ]
** প্রবাদের প্রাচীনতা নির্ণয় করতে গেলে এগুলির রূপ ও প্রয়োগের বিচিত্র রূপান্তর লক্ষ করা যায়। এব্যাপারে ১টি উদাহরণ উল্লিখিত হলো—
অপণা মাংসেঁ হরিণা বৈরী (চর্যাপদ)
আপণ গাএর মাঁসে হরিণি বিকলী (শ্রীকৃষ্ণকীর্তন)
হরিণী জাগায় ভাল কুটুম্ব বিবাদ (বিদ্যাপতির পদ)
আপনার মাংস আপনার হৈলা অরী বা, জগৎ হৈল বৈরী আপনার মাংসে (মুকুন্দরাম)
** শ্রীকৃষ্ণকীর্তনে প্রাচীন প্রবাদ-প্রবচন-এর পরিমাণ কম নয়। রাধা, কৃষ্ণ বা বড়ায়ির মুখে প্রাসঙ্গিক কথাগুলি বসিয়ে অবশ্যই কবি কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। এ থেকে অবশ্যই সেসময়ের বাংলা পল্লি অঞ্চলে কি ধরনের প্রবাদ প্রচলিত ছিল তার ধারণা পাওয়া যাবে।
** শ্রীকৃষ্ণকীর্তন থেকে ৪২টি প্রবাদ-প্রবচন উদ্ধৃত করা গেল। নিচে খণ্ড অনুযায়ী (১০টি) একটা তালিকা দেওয়া হলো—
খণ্ড-নাম
|
প্রবাদ-প্রবচন সংখ্যা
|
তাম্বূল
|
১
|
দান
|
২৪ সবথেকে বেশি
|
নৌকা
|
১
|
ভার
|
৪
|
ছত্র
|
২
|
বৃন্দাবন
|
১
|
বস্ত্রহরণ
|
১
|
বাণ
|
১
|
বংশী
|
৩
|
রাধাবিরহ
|
৬
|
** জন্মখণ্ড, কালিয়দমনখণ্ড এবং হারখন্ড থেকে কোনো প্রবাদ-প্রবচন উল্লিখিত হয়নি।
নিম্নে প্রবাদ-প্রবচন গুলি খণ্ডের ক্রম অনুযায়ী উল্লেখ করা হলো
১। যে থানে শুঁচী না জাএ তথা বাটিআ বহাএ। –-তাম্বুলখণ্ড, পদ ২৯
২। ললাট লিখিত খণ্ডন না জাএ। –-দান ৪১
২। ললাট লিখিত খণ্ডন না জাএ। –-দান ৪১
৩। জরম গেল করমের খঅ কাল কাহ্নাঞিঁর হাথে।—দান ৪১
৪। কার কাঁচ আলিতে না দেওঁ মোএঁ পাএ।–-দান ৪৬
৫। দেখিল পাকিল বেল গাছের উপরে।
আরতিল কাক তাক ভখিতেঁ না পারে।—দান ৪৮
৬। গলাত পাথর বান্ধী দহে পসী মরে।—দান ৫২
৭। পরঘর পইসে যেহ্ন চোর পাটাবুক।-–দান ৫২
৮। জরুয়া দেখিআঁ যেহ্ন রুচক আম্বল।–-দান ৫২
৯। পোএর মুখে পরবত টলে—দান ৫৪
১০। লাজে সে হারায়ি কাজে।—দান ৫৭
১১। পরধন দেখিলেঁ কি পাএ ভিখারী।—দান ৬৪
১২। কার পান চুন নাহিঁ খাওঁ।—দান ৬৮
১৩। মাকড়ের হাতে যেহ্ন ঝুনা নারীকল।-–দান ৭৮
১৪। চারি পাস চাহোঁ যেন বনের হরিণী ল নিজ মাঁসে জগতের বৈরী।—দান ৮৪
১৫। আপণার মাঁসে হরিণী জগতের বৈরী।—দান ৯৬
১৬। এভোঁহো নাহিঁ ঘুচে তোর মুখে দুধবাস।–দান ১০২
১৭। যাত খিধা বসে নাগরি রাধা কিবা তার কাঁচ পাকাএ।—দান ১০৫
১৮। তপত দুধ নালে না পীএ জুড়ায়িলেঁ সোআদ তাএ।—দান ১০৫
১৯। আকাশের চাঁদ চাহা তাক আণি দিবোঁ।—দান ১০৬
২০। আপণ গাএর মাঁসে হরিণি বিকলী।—দান ১০৭
২১। জুড়ায়িলেঁ সোআদ লাগে তপত দুধ।—দান ১২৬
২২। ভুখিল হয়িলে কাহ্নাঞিঁ দুঈ হাথে না খাইএ।—দান ১২৬
২৩। মাকড়ের যোগ্য কভোঁ নহে গজুমতী।—দান ১৩০
২৪। ভাতের ভোখ কাহাঞিঁ ফলেঁ না পালাএ।–-দান ১৩৭
২৫। আপণা রাখিএ আপনে।-–দান ১৪৬
২৬। মুদিত ভাণ্ডারে কাহ্নাঞিঁ না সাম্বাএ চুরী।—নৌকা ১৬১
২৭। সাপের মুখেতে কেহ্নে আঙ্গুল দেসী।—ভার ১৮৪
২৮। চুন বিহনে যেহ্ন তাম্বুল তিতা।
আলপ বএসে তেহ্ন বিরহের চিন্তা ৷৷—ভার ১৮৪
২৯। হাথ বাঢ়ায়িলেঁ কি চান্দের লাগ পাই।–-ভার ১৯৪
৩০। গোপত কাজত কাহ্নাঞিঁ ছয় আখি বারী।—ভার ১৯৯
৩১। আলপ কাম কৈলেঁ হৈব বড় কাজ।—ছত্র ২১৩
৩২। দেখিআঁ সাধুর ধন চোর পুড়ী মরে।—ছত্র ২১৪
৩৩। পাত পাতিআঁ কেহ্নে নাহিঁ দেহ ভাত।–-বৃন্দাবন ২২৮
৩৪। যার কান্ধে বসে দোষর মাথা।—বস্ত্রহরণ ২৫৬
৩৫। মারন্তাক যে না মারে তার পাণী না লএ পীতরে।—বাণ ২৯১
৩৬। বন পোড়ে আগ বড়ায়ি জগজনে জাণী।
মোর মন পোড়ে যেহ্ন কুম্ভারের পণী।—বংশী ৩১০
৩৭। দৈব নিবন্ধন খণ্ডন না জাএ।—বংশী ৩২৯
৩৮। আখায়িল ঘাঅত বিষ জালিল কাহাঞিঁ।–বংশী ৩৩৬
৩৯। দহ বুলী ঝাঁপ দিলোঁ সে মোর সুখাইল ল।—রাধাবিরহ ৩৬২
৪০। সোনা ভাঙ্গিলেঁ আছে ঊপাএ জুড়িএ আগুন তাপে।
পুরুষ নেহা ভাঙ্গিলেঁ জুড়িএ কাহার বাপে৷—রাধাবিরহ ৩৮৬
৪১। যে ডালে করো মো ভরে সে ডাল ভাঙ্গিঞাঁ পড়ে।—রাধাবিরহ ৩৯২
৪২। বিষাইল কাণ্ডের ঘাএ যেহেন হরিণী।—রাধাবিরহ ৪১২
৪৩। ভাঁগিল সোনার ঘট যুড়ীবাক পারী।
উত্তম জনের নেহা তেহেন মুরারী।।
যে পুণি আধম জন আন্তরে কপট।
তাহার সে নেহা যেহ্ন মাটির ঘট।।—রাধাবিরহ ৪১৭
তাহার সে নেহা যেহ্ন মাটির ঘট।।—রাধাবিরহ ৪১৭
৪৪। কাটিল ঘাঅত লেম্বু রস দেহ কত।–-রাধাবিরহ ৪১৮
———————————————————–
———————————————————————
ঋণ : অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য
——————————————————————–
ঋণ : অমিত্রসূদন ভট্টাচার্য
——————————————————————–