Subscribe to Updates
Get the latest creative news from FooBar about art, design and business.
Author: Bangla Sahitya
২৯ আগস্ট ১৯৭৬। ঢাকার পি জি হাসপাতাল। ডাক্তার নার্সদের ব্যস্ততা। জীবনমৃত্যুর সাথে লড়াই করে চলেছেন। ৭৭ বছর বয়সী নির্বাক, মূক অপলক দৃষ্টির এক মানুষকে বাঁচানোর লড়াই। না হেরে গিয়েছিল গোটা হাসপাতাল। অমোঘ মৃত্যু ছিনিয়ে নিয়ে গিয়েছে সেই মানুষটিকে। তারপর সবটাই ইতিহাস। বাংলাদেশ বেতার তরঙ্গে সমগ্র বিশ্ব জানাল দীর্ঘ ৩৪ বছর নির্বাক, মূক অপলক দৃষ্টি নিয়ে আজও বেঁচে ছিলেন কবি নজরুল। দুই বাংলা জুড়ে পালিত হল তাঁর স্মরণ সভা। তাঁর নাম গড়ে উঠল অগণন সভা , সমিতি। এই বিষয়ে বড় ব্যথায় তিনিই বলেছিলেন, ” যেদিন আমি দূর তারার দেশে চলে যাব, আমাকে নিয়ে কত সভা হবে, সমিতি হবে,…
১. প্রাগ্-আধুনিক বাংলা সাহিত্যের type কিংবা individual চরিত্রের প্রবাহে কিছু চরিত্র ঘুর্ণিস্রোতের মতো পাঠকের মনকে দোলায়িত করে। স্বাভাবিকভাবেই এইসব অতি-উজ্জ্বল চরিত্রগুলি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণের দাবি রাখে। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের আখ্যানকাব্যগুলিতে প্রায়ই নায়ক বা নায়িকার দূতী-সহচরীরূপে কিছু চরিত্রের উপস্থিতি লক্ষ করি, যারা কাহিনী-অংশে অনেকটাই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। রামায়ণের মন্থরাকে এইসব চরিত্রের পূর্বজ বলা যায়, যাদের ভূমিকা নিয়ে দ্বিমত হবার জো নেই। মধ্যযুগের কাব্যে আমরা এইরকমই কুট্টিনীজাতীয়া চরিত্র যেমন পেয়েছি তেমনই মনসার সহচরী নেত’র মতো সুপরামর্শদাত্রীকেও পেয়েছি। তবে দুই জাতীয় চরিত্রেরই উপস্থিতি সহচরী রূপে। এই ধরনের কয়েকটি চরিত্রকে আমরা তালিকাবদ্ধ করতে পারি— ১। বড়ায়ি (শ্রীকৃষ্ণকীর্তন) ২।…
বাল্মীকি প্রতিভায় রবীন্দ্রনাথ ও ইন্দিরা দেবীরবীন্দ্রনাথের প্রথম অভিনয় কোন্ নাটকে? কোন ভূমিকায়? যতদূর জানা যায়, বাড়ির কুস্তির আখড়ার নরম মাটিতে বাখারি পুঁতে মঞ্চ বেঁধেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। খুবই কম বয়স ছিল তাঁর তখন। ইচ্ছে ছিল অভিনয়ের। কিন্তু বাড়ির গুরুজনদের বাধায় সে সাধ পূর্ণ হয় নি তাঁর। মঞ্চে রবীন্দ্রনাথের প্রথম অভিনয় নাকি জ্যোতিরিন্দ্রনাথের লেখা ‘অলীকবাবু প্রহসনের নাম ভূমিকায়। কিন্তু এ বিষয়ে কিছু মতদ্বৈধ আছে। খগেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় তাঁর ‘রবীন্দ্র কথা’-য় জানিয়েছেন রবীন্দ্রনাথের প্রথম অভিনয় হল ‘মানময়ী’ গীতিনাট্যে মদনের চরিত্রে। এটি ছিল একটি ঘরোয়া নাট্যানুষ্ঠান। খগেন্দ্রনাথ যদিও জানিয়েছেন ‘মানময়ী’ জ্যোতিরিন্দ্রনাথের লেখা কিন্তু ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী লিখেছেন যে ‘রবীন্দ্রনাথেরই প্ররোচনায় সম্ভবত মানময়ী নাটক (প্রথম প্রকাশ ১৮৮০…
১ খোশবাসপুর গ্রামের এই বাড়িতেই আমি জন্মগ্রহণ করেছিলুম এবং জন্মের পরেই দেখেছিলাম চারপাশে শুধু পত্রপত্রিকা আর বইয়ের স্তূপ। এরই মধ্যে বড় হয়েছিলুম। মাকে দেখতাম উঠোনে বসে এই বাড়িরই পেয়ারা গাছের তলায় বিকেলে হাঁটুর উপর কাগজ রেখে কবিতা লিখতেন, গল্প লিখতেন বা প্রবন্ধ লিখতেন। দেখাদেখি আমারও লিখতে ইচ্ছে করতো এবং আমিও ততদিনে লেখাপড়া খানিকটা শিখেছি, লিখতে পারি। লুকিয়ে লুকিয়ে বাবার বইয়ের সংগ্রহ থেকে একটা বই একদিন পড়ে ফেললাম, তার নাম ‘অনন্তপুরের গুপ্তকথা’। সেই বইটা পড়ে আমার হঠাৎ খেয়াল হলো যে,আমিও একটা ওইরকম গুপ্তকথা লিখি। লিখে ফেললাম ‘খোশবাসপুরের গুপ্তকথা’; বেশ কয়েক পাতা লিখে ফেললাম, এই ভাবেই আমার প্রথম লেখা জীবন খুব…
ছবি- উইকিপিডিয়ারবীন্দ্র-জীবনে ও সাহিত্যে শাহজাদপুর একটি অবিস্মরণীয় নাম। সুদীর্ঘ জীবনকালে স্বদেশের এবং বিদেশের বহুস্থান ভ্রমণ করেছেন রবীন্দ্রনাথ। এই সকল ভ্রমণের কারণ এবং উপলক্ষ্য ছিল প্রত্যেক ক্ষেত্রেই পৃথক। কিশোর বয়সে পিতার সঙ্গে হিমালয় ভ্রমণ থেকেই প্রধানত তাঁর ভ্রমণের শুরু। শাহজাদপুর ভ্রমণ নিতান্তই বৈষয়িক কারণে। ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে বিলাত থেকে ঘুরে আসার পর জমিদারি তদারকীর ভার ন্যস্ত হয় রবীন্দ্রনাথের উপর।উত্তরবঙ্গে বিরাট জমিদারি ঠাকুরদের।তার মধ্যে বেশি আয়ের ছিল শাহজাদপুর। প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের আমলে উনবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি শিলাইদহ, শাহজাদপুর ও কালীগ্রামের জমিদারি ঠাকুরদের হাতে আসে। ১৮৪০ সালের ২০ আগস্ট মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের পৈত্রিক ডিহি শাহজাদপুর ও পরগণা কালীগ্রাম একত্র করে এর ভার একটি ট্রাস্টি বোর্ডের উপর…
হাসন রাজার বহুমাত্রিক চরিত্রলেখক – শক্তিনাথ ঝাগগন, লালন এবং হাসন রাজার নাম এবং রচনাকে ব্যবহার করেছেন রবীন্দ্রনাথ তাঁর বক্তৃতায় এবং রচনায়। ভারতীয় দর্শন কংগ্রেসের অভিভাষণে (১৯২৫)লোক-দার্শনিক হাসন রাজা এবং তাঁর গানকে ইংরেজি অনুবাদে পরিবেশন করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। ১৯৩০-এ অক্সফোর্ডে প্রদত্ত হিবার্ট বক্তৃতামালায় (দ্য রিলিজিয়ন অফ ম্যান) রবীন্দ্রনাথ হাসন রাজার দু’টি রচনাকে অনুবাদ করে ব্যবহার করেন। ইংরেজি এবং বঙ্গানুবাদে এ সমস্ত রচনা ‘মডার্ন রিভিউ’, ‘বিশ্বভারতী কোয়ার্টারলি’, ‘প্রবাসী’ এবং ‘বঙ্গবাণী’তে প্রকাশিত হয়েছিল। পরে এগুলি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়ে দেশের বিদগ্ধজনের কাছে গৃহীত হয়। শ্রীহট্টের হাসন রাজা ১৯০৭-এ তাঁর ‘হাসন উদাস’ গ্রন্থ প্রকাশ করেছিলেন। শ্রীহট্টের কলেজের ছাত্র প্রভাতকুমার শর্মার নিবন্ধ এবং তাঁর হস্তলিখিত গানের মাধ্যমে হাসন…
রামকিঙ্কর বেইজ । অভিনব শিল্পরূপের উদ্ভাবকলেখক- মনসিজ মজুমদার ভারতীয় কলা ইতিহাসে প্রথম আধুনিকতাবাদী শিল্পী রবীন্দ্রনাথ। তাঁর পরেই রামকিঙ্কর। তিনিই প্রথম আধুনিক ও আধুনিকতাবাদী ভাস্কর। রামকিঙ্কর কলাসাধনা, জীবনচর্চা, ব্যক্তিত্ব, তাঁর ছবি, ভাস্কর্য সব কিছুই এমনই ব্যতিক্রমী যে, তিনি জীবদ্দশাতেই প্রবাদে পরিণত হয়েছিলেন। তিনি ‘সংঘে সমষ্টিতে একলা, একা’ শিল্পী, যাঁকে সমাজ-সংসারের কোনও তুচ্ছতা, জীবনের কোনও মালিন্য স্পর্শ করতে পারেনি। ‘রামকিঙ্করের মত এত বড় মাপের শিল্পীর জীবন ও শিল্পকৃতি নিয়ে একটি পূর্ণাঙ্গ বই আজও লেখা হয়নি’, পরিতোষ সেন একবার দুঃখ করেছিলেন। তাঁর সম্পর্কে বই, মোনোগ্রাফ, প্রবন্ধ, স্মৃতিচারণা, শিল্পীর নিজের ভাষায় তাঁর জীবন, সৃষ্টিকাজ, কলাভাবনা সংক্রান্ত নানা নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। আলোচ্য বইটি একটি প্রবন্ধ সংগ্রহ মাত্র।…
বাংলা লিপির ইতিকথালেখক- সুভাষ ভট্টাচার্যসাদামাটা হিসেবে লিপির বয়স ছ-হাজার বছরের মতো। কাজেই মুখের ভাষার তুলনায় লিপি নিতান্তই নবীন। লিপির উদ্ভব হয়েছিল মুখের ভাষার চিত্ররূপ হিসেবে। তবে সেই লিপি নিঃসন্দেহে মুখের ভাষার অপূর্ণাঙ্গ দৃশ্যরূপ। প্রাচীনতম লিপি হল চিত্রলিপি (pictogram)। পাহাড়ে-কন্দরে বা গুহার পাথরের গায়ে যে-ছবি এঁকে আদিম মানুষ তার মনোভাব প্রকাশ করত, তা-ই চিত্রলিপি। চিত্রলিপি চামড়াতেও আঁকা হত। আদিম চিত্রলিপির নিদর্শন পাওয়া গেছে মেক্সিকোয় এবং উত্তর ও মধ্য আমেরিকার আদিম উপজাতিসমূহের অঙ্কনে। লিপি পরবর্তী ধাপগুলো হল ভাবলিপি (ideogram), চিত্রপ্রতীকলিপি (hieroglyph), ধ্বনিলিপি (phonogram) শব্দলিপি (logogram),অক্ষরলিপি (syllabic script), বর্ণলিপি (alphabetic script)I যেখানে চিত্রলিপিতে কেবল বস্তুর প্রতি নির্দেশ থাকত, সেখানে ভাবলিপিতে ‘ভাব’ও বোঝানো হত–…
স্বাধীনতা সংগ্রামী রাসবিহারী বসুর বিবাহলেখক : কল্যাণ চক্রবর্তীপার্টিতে এসেছেন কেস্টু-বিস্টুরা। কে ওই মেয়েটি ? অসাধারণ সুন্দরী, লাবণ্যময়ী। ঠোঁটের কোণে মৃদু হাসি। দু’চোখে উপাসনা মন্দিরের স্নিগ্ধতা। নরম সূর্যের আভা দুটি গালে। যুবকটি তখনও জানে না, আজাবুতে এই মেয়েটিই যোগাযাযোগের মাধ্যম ছিল। ব্রিটিশ পুলিশের সন্দেহ হয়নি। দুজনের কখনওই সাক্ষাৎ হয়নি। মেয়ের মা’ও মেয়েকে আগলে রাখতেন। মেয়ের জীবনে ছবি আঁকিয়ের উপস্থিতি তাঁর অজানা নয়। শিল্পীর নাম ৎসুনে নাকামুরা। পনেরো বছরের স্কুল ছাত্রীটির নগ্ন ছবি এঁকে ইতিমধ্যেই সাড়া ফেলেছেন শিল্পী। নুড ইমেজ অব এ গার্ল, এ ফিমেল ইমেজ, এ গার্লস প্রভৃতি ছবি নজর কেড়েছে জাপানে। সন্ধ্যা প্রদীপের আলোয় শিল্পীকে মনও দিয়ে ফেলেছিলেন পঞ্চদশী।…
ঈশ্বরের নামে জালিয়াতি লেখক – আবীর কর আঠারোশো পঞ্চান্ন সালে প্রকাশিত হয়েছিল বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’, বাংলা প্রাইমারের এক মাইলস্টোন। এই মাইলস্টোনকে নির্ভর করে আজ দেড়শো বছরের বেশি সময় ধরে চলেছে বাঙালি বর্ণশিক্ষা। শুধু তাই নয়, ১৮৫৫-পরবর্তী বাংলা প্রাইমারের ধারাটিও নিয়ন্ত্রিত হয়েছে বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’-এর মাধ্যমে; বিদ্যাসাগরের হাতে গড়া বাংলা বর্ণমালার ব্যাকরণসম্মত সংস্কার—অসংযুক্ত পাঠ ও সংযুক্ত পাঠকে দুটি ভাগে ভাগ করা, আজও অনুসৃত হয়ে চলেছে। শুধু তাই নয়, এই দেড়শো বছরে ‘বর্ণপরিচয়’ গ্রন্থের বিপুল জনপ্রিয়তায় আকৃষ্ট হয়ে অসংখ্য বাংলা প্রাইমারে জুড়ে গেছে ‘বর্ণপরিচয়’ শব্দটি। ‘সহজ’, ‘সরল’, ‘সুবোধ’, ‘সচিত্র’— বিশেষণ যোগে ‘বর্ণপরিচয়’ প্রকাশিত হল, নামের পূর্বে যুক্ত হল ‘নব’, ‘নতুন’, ‘প্রথম’…