সাহিত্যকে যদি আমরা স্থূলভাবে শ্রেনিবদ্ধ করতে চাই তো তার দুটি শ্রেণি পেতে পারি — এক। লিখিত সাহিত্য, দুই। মৌখিক সাহিত্য। অন্যভাবেও এর শ্রেণিবিভাজন চলতে পারে, যথাক্রমে – নাগরিক সাহিত্য এবং লৌকিক সাহিত্য (লোকসাহিত্য)। যদিও পরবর্তীকালে মুদ্রনযন্ত্রের কল্যাণে মৌখিক সাহিত্য লিপিবদ্ধ হয়েছে। সঙ্ঘত সমাজ , যেখানে নিরক্ষর মানুষের সংখ্যাই বেশি; তাদের দ্বারা মুখে মুখে রচিত যা কিছু রচনা, যা শ্রুতি পরম্পরায় চলে আসে এক প্রজন্ম থেকে আর এক প্রজন্মে, তাই হল লোকসাহিত্য পক্ষান্তরে মৌখিক সাহিত্যও বটে (folk literature is simply literature transmitted orally) এই ভূমিকাটুকু এই জন্য যে, আমাদের আলোচ্য ‘খেলার ছড়া’ (‘খেলাচালানি ছড়া’ – সুকুমার সেন) বিষয়টি কোনও পরিশীলিত নাগরিক সাহিত্যের পর্যায়ভুক্ত নয়, তা নিতান্তই লোকসাহিত্য সম্পৃক্ত। বিষয়টির সঙ্গে হয়তো অনেকেই পরিচিত। তবু বলি, খেলতে খেলতে শিশুরা যে ছড়াগুলি বলে সেগুলিকেই খেলার ছড়া বলা চলে। এখন প্রশ্ন হল কোন্ খেলা ? হ্যাঁ, এখানে একটু বিশদ বলবার প্রয়োজন রয়েছে। লোকসংস্কৃতির যে বিভিন্ন দিক রয়েছে এই খেলা (লোকক্রীড়া) তার একটি পর্যায়। প্রত্যন্ত গ্রামের শিশুরা তাদের অবসর সময়ে নানারকমের খেলায় নিজেদের ব্যাপৃত রাখে। আনদান্দয়ক কাজের মধ্যে দিয়ে সময় অতিবাহিত করার বাসনা থেকেই খেলার উৎপত্তি। এইসব খেলাগুলো যে কবে কোন্ মাতৃজঠর থেকে প্রসবলাভ করেছিল তা আর এখন সঠিকভাবে বলা সম্ভব নয়। “যা মানুষের ঐতিহ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বংশ পরম্পরায় চলে আসছে, মানুষের জীবনচর্চার মধ্যে দিয়ে এক যুগ থেকে অন্য যুগে অন্য যুগে সঞ্চারিত হয়ে যায়, যা জীবনের অনুকৃতির প্রতীকীরূপ এবং যার মধ্য ফ্যান্টাসি ও স্বত:স্ফূর্ত আনন্দের অভিব্যাক্তি ফুটে ওঠে, সেই ক্রীড়াগুলিই লোকক্রীড়া।”১ এখন বোঝার সুবিধার্থে এই ধরনের লোকক্রীড়াগুলিকে দুইভাগে ভাগ করে দিলাম —
ক। বাইরের খেলা (outdoor game)
খ। ঘরের ভিতরের খেলা (indoor game)
— বাইরের খেলা কিংবা ভিতরের খেলা যাই হোক না কেন, খেলাগুলি একান্তই শিশুদের মানস-সঞ্জাত ঘরোয়া খেলা। খেলা প্রিয় নয় এমন শিশু পাওয়া দুর্লভ, গ্রামে তো নয়ই। বঙ্গদেশে প্রচলিত এমন কয়েকটি খেলা হলো —
১। একা একা খেলা (ঘুড়ি ওড়ানো, গুলতি ছোঁড়া)
২। দুইজনের খেলা (গুলি, বাঘবন্দি, ষোলো গুটি)
৩। দলবদ্ধ খেলা (চু কিত কিত, এক্কা দোক্কা, জেলে মাছ, পাতা-পুঁতি, উলটো ডিঙি মাছের কাঁটা)
৪। নিতান্তই বসে খেলা (ইকড়ি মিকড়ি, কোটো মোটো, রস-কষ-সিংহ-বুলবুলি)
৫। বিবিধ (বর-বউ, পুতুলখেলা, রান্নাবান্না)
— এখানে দুটি বিষয়ে পাঠকদের দৃষ্টি আকর্ষন প্রয়োজন, এক। খেলাগুলির নাম স্থানভেদে আলাদা হলেও মোটামুটি একই। দুই, উল্লিখিত খেলাগুলির প্রতিটিই যে ছড়া কেটে খেলতে হয় এমন নয়। কিছু খেলা আছে যা শিশু এমনই খেলে বা খেলা যায়। যে খেলাগুলোর সঙ্গে ছড়া বলতে হয় অর্থাৎ ছড়া কেটে যে খেলা খেলতে হয়, ছড়া ছাড়া সেই খেলাগুলি খেলাই যায় না। বোধহয় ছড়াগুলি যেন খেলার (folk game) প্রানভোমরা, ছড়াবিহীন খেলা তাই নিষ্প্রান। এই খেলার ছড়া যেন শিশুর সহজাত সৃজনীশক্তির স্বচ্ছন্দ বহিঃপ্রকাশ। শিশুরা খেলতে খেলতেই ছড়া বানায়, বয়স্ক মানসিকতার ছাপ সেখানে থাকে না। তাই তা শিশুরই মতো সহজ সরল, অসংলগ্ন, অস্পষ্ট, দুরন্ত। আলোচনা প্রসঙ্গে বলে রাখা ভালো ‘ছেলে ভোলানো ছড়া’ ও ‘খেলার ছড়া’ সম্পূর্ণ ভিন্ন দুই মেরুর। জননী স্থানীয়ারা (মা-মাসি-পিসি) আদরের সন্তানকে ভুলিয়ে ঘুম পাড়াতে বা খুশি করতে আদর করে যে ছড়াগুলি বলতো (হ্যাঁ…… কেননা এখন এমনটা আর দেখা যায় না) তা হলো ‘ছেলে ভোলানো ছড়া’ (ঘুমপাড়ানি গান) ; কিন্তু ‘খেলার ছড়া’ সম্পূর্ণত শিশুদের সম্পদ — এরাই এর সৃষ্টিকর্তা এবং এদের মাঝেই খেলাগুলি খেলে বেড়ায়, শিশুরাই এর প্রকৃত সমঝদার। খেলার মতোই ছড়াগুলো কোনো ব্যাক্তিবিশেষের রচনা নয়, লোকসমাজেরই গর্ভে এর জন্মলাভ। ছড়ার অবয়ব গঠনের পিছনে একটি তত্ত্ব রয়েছে, ‘পুনঃসৃজন তত্ত্ব’ (Re-creation Theory)। বিশদে বললে – ছড়াগুলি প্রথমে ব্যাষ্টি কর্তৃক রচিত হয়; তারপর সংযোজন, বিয়োজন এবং পরিশেষে পুনঃসৃজনের মাধ্যমে নতুনরূপে আত্মপ্রকাশ করে এই হলো Re-creation Theory বা পুনঃসৃজন তত্ত্ব। অন্যভাবে বললে, ছড়াগুলির মূল আদিম আকৃতি কয়েকটি motif-এর সমষ্টিমাত্র কিন্তু সময়ের প্রবাহে এই ছড়াগুলি সংগ্রহ করে আরও কিছু নুড়ি-বালি। ফলে তার কলেবর বৃদ্ধি পায়।
ছড়াকে বিভিন্ন দিক দিয়ে বিভিন্নভাবে অনেকেই আলোচনা করেছেন, করছেন, করবেন। লোকসংস্কৃতির বিভিন্ন গবেষকগণ ঐতিহাসিক, রূপতাত্ত্বিক কিংবা নৃতাত্ত্বিক দিক দিয়ে ছড়াকে বিশ্লেষণ করে বহু নতুন তথ্য আবিষ্কার করেছেন। ঐতিহাসিক সামাজিক ইত্যাদি দিক দিয়ে বিশদ বিশ্লেষণের প্রয়োজন এখানে নেই। তবে কয়েকটি দিকের আলোচনা এ প্রসঙ্গে করা যেতে পারে।
ক। ছড়ার অসংলগ্নতা :
সৃষ্টিশীল কবি-স্বভাবের আদিমতম রচনা বোধহয় ছড়া। তাই এর অন্তর্গঠনে রয়েছে অসংবদ্ধ ভাবনার যুক্তিহীন পাগলামি আর বহিরঙ্গে ছন্দের দোলায়িত আবেশ। আর শিশুরাইযখন এর সৃষ্টিকর্তা তখন এর সাথে মেশে পাগলামি, অবোধ স্বভাব, অনাবিল আনন্দ, উদ্ভটত্ব খাপছাড়া ভাবনা। যেমন এই ছড়াটিতে অসংলগ্নতার চিত্র –
লাল লাল বাক্স
স্প্রিং
ঘোড়ায় চাপি
কিংবা,
লাল্টুর ভাই পল্টু
ইকড়িতে বিকড়ি কাটা ……… ইত্যাদি।
খ। ছড়ায় কামচারিতা :
ছড়ার উল্লেখযোগ্য একটি লক্ষ্মণ হলো এর ‘কামচারিতা’। রবীন্দ্রনাথ তাঁর ‘ছেলেভোলানো ছড়া ২’ নামক প্রবন্ধে প্রথম এরূপ বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করেছেন। যার মূলকথা হলো সরলমতি শিশুরা তাদের রুচি, মর্জি অর্থাৎ কামনা মতো ছড়াগুলোর পরিবর্তন সাধন করে। এই কারণেই একই ছড়া বিভিন্ন অঞ্চলে এতটাই পরিবর্তিত আকারে প্রাপ্ত হয় যে motif ছাড়া স্পবটাই পালটে যায়। যেমন –
১। আগডুম বাগডুম সাজ
টাঁই মিরগেল ঘাঘর বাজে ………
২। আগডুম বাগডুম ঘুড়াডুম সাজে
লাল মিরগেল ঘাঘর বাজে …………..
৩। আগডুম বাগডুম ঘোড়াডম সাজে
ডান মেক্ড়া ঘাঘর বাজে……… (এগুলি রবীন্দ্রনাথ সংগৃহীত)
— আবার এত দেখা যায়, দুটি ছড়াকে এরা নিজস্ব স্বকীয়তায় মিলিয়ে দিয়ে একটা ছড়ায় রূপ দেয়। এর কৈফিয়ৎ হিসেবে বলা যায় খেলা চলাকালীন এদের অসংলগ্ন মানসিক অবস্থা।
গ। ছড়ায় যৌন ভাবনা :
[১] চম্পা দত্ত / সাত ইঞ্চি গর্ত
গর্তের মধ্যে কেউটে সাপ / চম্পা বলে বাপ রে বাপ।।
[২] কল্পনারে কল্পনা / কল পুততে যাব না
কলের মধ্যে রুইমাছ / ধরতে গেলে সর্বনাশ।।
— এখানে ‘গর্ত’ , ‘সাপ’ কিংবা ‘রুইমাছ’-এর চিত্রকল্পগুলি phallic symbol যে নয় এমন কথা বলা যায় না। গর্ত এবং সাপ একে অপরের বিপরীত প্রতীকী। আবার –
কচি কচি পেয়ারা / কচির কী চেহারা
কচি যখন পাকবে / রাস্তার লোকে দেখবে।।
— এখানেও ‘পেয়ারা’র প্রতীকীতে নারীদেহের স্তনের প্রতি ঈঙ্গিত করা হয়েছে।
সংকলিত ছড়াগুলি বিভিন্ন গ্রাম্য খেলার সঙ্গে জড়িত। এখানে অন্যান্য ছড়া সংগ্রহের কোনো গ্রন্থ সামনে রেখে সংগৃহীত হয়নি। এগুলি সংগৃহীত হয়েছে তাদের কাছ থেকে যারা এই ধরনের খেলা খেলেছে। উত্তর ২৪ পরগনার বসিরহাট সংলগ্ন উত্তর বাগুন্ডি, গোটরা, শশিনা প্রভৃতি গ্রামে এগুলি প্রচলিত।
১
লাল্টুর ভাই পল্টু
ইকড়িতে বিকড়ি কাটা
জবা ফুলের কণ্ঠমালা
আলতা সিঁদুর বোলতা মাখা
বুড়ো দাদুর এক ঠ্যাং খোঁড়া।।
২
হলুদ গাছের গোড়ায়
ঝরণা পাখি ডাকে
ও পাখি তুই ডাকিস না
মেয়ের গলা ভাঙিস না।।
মেয়ের মাথায় কোঁকড়া চুল
বেঁধে দোব গোলাপ ফুল।।
৩
আই অ্যাম মিতা
চুলে বাঁধি ফিতা
কানে পড়ি দুল
আমার পছন্দ গোলাপ ফুল
গোলাপ ফুলে পোকা
জামাইবাবু বোকা
এ জামাইবাবু চাই না
দিদি করে বায়না
ছেলের বাবা অফিসার
তার ভাই বক্সার
তার বোন ড্যান্সার।।
৪
কচি কচি পেয়ারা
কচির কি চেহারা
কচি যখন পাকবে
রাস্তার লোকে দেখবে।।
[ ছড়াটিতে যৌন ঈঙ্গিত বেশ স্পষ্ট, আর পেয়ারা যে ‘নারীর স্তন’ তা বলাই বাহুল্য।]
৫
আম আম আম
কাঁচা মেটে আম
বাজার থেকে কিনতে গেলে
হাজার টাকা দাম
আজকাল মেয়েরা প্যান-শার্ট পরে
তাই না দেখে ছেলেরা
ডান চোখ মারে।।
৬
আম পাতা জোড়া জোড়া
মারবে চাবুক চড়বো ঘোড়া
ওড়ে বিবি সরে দাঁড়া
আসছে আমার পাগলা ঘোড়া
পাগলা ঘোড়া ক্ষেপেছে
বন্দুক ছুঁড়ে মেরেছে
মেম খায় চা বিস্কুট
সাহেব বলে ভেরি গুড।
৭
চম্পা দত্ত
সাত ইঞ্চি গর্ত
গর্তের মধ্যে কেউটে সাপ
চম্পা বলে বাপরে বাপ।।
[ এখানেও যৌনতা এসেছে, ‘গর্ত’ নারীর যৌনাঙ্গ এবং ‘সাপ’ পুরুষের যৌনাঙ্গের প্রতীকী হিসাবে ব্যবহৃত।]
৮
আমরা দুতি ভাই
দুটি লজেন্স কিনে খাই
একটি লজেন্স পড়ে গেলে
দাদুর কাছে চাই
দাদু মারলো চাটি
হয়ে গেল আঁটি
আঁটিতে নেই শাঁস
হয়ে গেল বাঁশ
বাঁশে নেই কঞ্চি
হয়ে গেল বেঞ্চি
বেঞ্চিতে নেই পায়া
হয়ে গেল সায়া
সায়াতে নেই দড়ি
হয়ে গেল বাড়ি
বাড়িতে নেই কেউ
ভাত দেয় না বড়বউ।।
৯
দম দম গাড়ি চলে
লিচু বাগানে
একটি লিচু পড়ে গেল
চায়ের দোকানে
চা ওয়ালা চা ওয়ালা
দোকান খোলো না
স্টিশানে বউ এসেছে
দেখতে চলো না।।
১০
খেলা খেলা খেলা
আমরা করি খেলা
এই মেয়েটা ওঠ
চোখের জল মোছ
আকাশের দিকে তাকা
তোমার বন্ধু কে ?
১১
একের পিঠে দুই
গোলাপ চাঁপা জুঁই
শান বাধাঁনো ভুঁই
চৌকি পেতে শুই
ইলিশ মাগুর রুই
গোবর জলে ধুই
পোটলা বেঁধে থুই
হিঞ্চে পালং পুঁই
কাঁদিস কেন তুই ?
১২
ওই আসতে কালো পাখি
কালো জামা গায়
অই জামাটা দিও না
আমার ভাবির গায়
ও বড়ো ভাবি ও বড়ো ভাবি
আলতা খেও না
আলতা খেয়ে পেট ফুললে
ডাক্তার পাবে না
ডাক্তারের বউ কাপড় কাচে
দুই ধারে দুই হরিণ নাচে
কোটোর খোলে পোরতো
কোটোই যদি নড়ে না
ডাক্তারেরাও মরে না।।
১৩
কল্পনা রে কল্পনা
কল পুঁততে যাবো না
কলের মধ্যে রুই মাছ
ধরতে গেলে সর্বনাশ।।
১৪
একটুখানি সাইকেল
তাতে চেপে যাই
গাড্ডার মধ্যে পড়ে গেলো
রাজার ছেলে ভাই।।
১৫
টুনটুনি পাখি
নাচ তো দেখি
নারে বাব নাচবো না
পড়ে গেলে বাঁচব না
পড়েছি বেশ করেছি
আল্লার কাছে হাত তুলেছি।।
১৬
নামতা এক কে নামতা
নামতা দুকুনো পান্তা
সেই পান্তা খেয়ে দাদু
হাটে চলিল
হাটে ছিল পাগলা কুকুর
কামড় মারিল
সেই কামড় খেয়ে দাদু
গাছে উঠিল
গাছে ছিল কাঠঠোকরা
ঠোকর মারিল
সেই ঠোকর খেয়ে দাদু
জলে পড়িল
জলে ছিল কুমির ভায়া
কামড় মারিল
সেই কামড় খেয়ে দাদু
স্বর্গে চলিল
স্বর্গে ছিল মা দুগ্গা
লাতি মারিল
সেই লাতি খেয়ে দাদু
পটল তুলিল
পটলে নেই শাঁস
হয়ে গেল বাঁশ
বাঁশে নেই কঞ্চি
হয়ে গেল বেঞ্চি
বেঞ্চিতে নেই পায়া
হয়ে গেল সায়া
সায়াতে নেই দড়ি
হয়ে গেল বাড়ি
বাড়িতে নেই কেউ
ভাত দেয় না কেউ।।
১৭
মেউ মেউ মেউ
তোমরা একটা পিঠে খাচ্ছ
আমায় একটু দাও।।
১৮
কোটো মোটো ঘাস কোটো
সুপারি ভরা পান
এ ধরতো ও ধরতো
ধরতো মুচির কান।।
১৯
টুম্পা
কাঁচা লঙ্কা
আলু ভাতে বেগুন পোড়া
টুম্পাকে নিয়ে গেল কাক-এ
টুম্পার মা ঘরে বসে কাঁদে।।
২০
– ওখানে কে রে ?
– আমি ভোলা।
– মাথায় কি রে ?
– আমের ঝোঁকা।
– খাসনে কেন ?
– দাঁতে পোকা।।
কিংবা
– মাথায় কি রে ?
– কাঁচা কলা।
– বেজবি কখন ?
– হাটের বেলা।
২১
লাল লাল টমেটো
খাটা করেছি
ভাইয়ের কাছে দিতে গেলে
পেঁদে ফেলেছি।।
২২
– এলাটিং বেলাটিং সইলো
– কীসের খবর আইলো ?
– রাজামশাই একটি বালিকা চাইলো ?
– কী বালিকা চাইলো ?
– ওমুক বালিকা চাইলো।
– কীসে করে যাবে ?
– পালকি করে যাবে ?
– কী জামা পরবে ?
– ওমুক জামা পরবে।
– কী জুতো পরবে ?
– ওমুক জুতো পরবে।
২৩
তেজপাতা তাজপাতা
তেজ কোরো না
তেজ করে চলে গেলে
কিস পাবে না।।
২৫
ইকড়ি বিকড়ি চাম চিকড়ি
চামে কাটা মজুমদার
ধেয়ে এল দামোদর
দামোদরের হাঁড়ি-কুঁড়ি
দোয়ারে বসে চাল কুটি
চাল কুটতে হল বেলা
ভাত খায় সে দুপুরবেলা
ভাতে পড়লো মাছি
কোদাল দিয়ে চাঁছি
কোদাল হল ভোঁতা
খায় শুয়োরের মাথা।।
[ এই প্রচলিত ছড়াটি রবীন্দ্রনাথের সংগ্রহেও রয়েছে। ‘লোকসাহিত্য’ গ্রন্থ দ্রষ্টব্য ]
২৬
উবু দাসের দোতলা বাড়ি
কাক বসেছে সারি সারি
বউ এনে দাও তাড়াতাড়ি
বউ কেন কালো
নাক কেটে ফেল
নাকে কেন রক্ত
কৃষ্ণর ভক্ত।।
২৭
ছুঁই
সুতো
লুচি
ফুটো।।
২৮
ইশ
বিশ
ধানের শিষ
তুই বেটা পেঁদেছিস
পেঁদে বলে পাঁদেনি
সাত সকালে হাগেনি।।
তথ্যসূত্র :
১। বরুণকুমার চক্রবর্তী (সঃ), বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতি কোষ, ডিসেম্বর ২০০৭, অপর্ণা বুক ডিস্ট্রিবিউটার্স, কলকাতা। পৃঃ ৪৯৮।
২। “… বাংলা ছড়ার সৃষ্টির পেছনে যে তত্ত্বটি কাজ করে তা হল ‘ক্রমপ্রসারণশীলতা’। অর্থাৎ যা ক্রমেই ছোটো থেকে বিকশিত হয়ে বড়ো হয়ে ওঠে।”—নির্মলেন্দু ভৌমিক, বাংলা ছড়ার ভূমিকা, এপ্রিল ১৯৭৯ (১ম), সাহিত্যশ্রী, কলকাতা। পৃঃ ২৫২