চর্যাপদের কবিদের পরিচয় নানা রহস্যে আবৃত। তা সত্ত্বেও গবেষকদের নিরন্তর প্রচেষ্টা ও শ্রমসাধ্য গবেষণায় বহু চর্যা কবির পরিচয় জানা গেছে। আমরা এখানে সেইসব কবিদের সম্বন্ধে কিছু তথ্য তুলে ধরলাম।
লুইপাদ লুইপা লুই পা
লুইপাদ কি প্রথম সিদ্ধাচার্য ?
চর্যাগীতিতে প্রথমেই সংকলিত হয়েছে লুইপাদের গান৷ টীকাকার মুনিদত্তের মতে ইনি ‘আদি সিদ্ধাচার্য”। তিব্বতী তালিকাতেও তাঁর নাম প্রথম ৷ কিন্তু তারানাথের বিবৃতি মতে লুইপাদ চতুর্থ সিদ্ধাচার্য ৷ আদিসিদ্ধা হলেন রাহলভদ্র সরহ, তাঁর শিষ্য সিদ্ধ নাগার্জুন, তৎশিষ্য শবরীপাদ বা দ্বিতীয় সরহ, এবং তাঁর শিষ্য লুইপা।
লুইপাদ তালিকায় প্রথমে এলেন কেন ?
রাহুল সংকৃত্যায়ন মনে করেন, যেহেতু লুইপা ছিলেন অসাধারণ ব্যক্তি তাই তাঁর নাম তালিকায় প্রথমেই স্থান পেয়েছে।
লুইপাদ-এর পরিচয়
[সময়কাল, পেশা, বৃত্তি, উপাধি কীভাবে পেলেন]
তারানাথের মতে, লুইপা ছিলেন উড্ডীয়ান-রাজ উদয়নের করণিক। তিনি মহাসিদ্ধ শবরীপাদের কাছ থেকে তন্ত্রাভিষেক লাভ করেন এবং নির্বিঘ্নে ধ্যান করার উদ্দেশ্যে বঙ্গদেশে গঙ্গাতীরে আসেন৷ সেখানে তিনি ১২ বছর মাছের অন্ত্র (Fish-entrails) ভক্ষণ করতেন এবং এইভাবে ‘মৎস্যান্ত্রাদ’ নামে পরিচিত হন। তাঞ্জুর তালিকামতে লুইপাদ বাঙালি মৎস্যান্ত্রাদ ৷ হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর সিদ্ধান্ত –লুইপাদ বাঙালি ৷ রাহুল সংকৃত্যায়ন বলেন, লুইপা ছিলেন রাজা ধর্মপালের কায়স্থ (সচিব ও লেখক)। সেই হিসেবে লুইপাদের জীবৎকাল দাঁড়ায় অষ্টম শতাব্দীর শেষপাদ ৷ লুইপার শিষ্য উড়িষ্যার রাজা দারিক ও তাঁর মন্ত্রী ঢেঁকি ৷ দারিকপাদ তার গানে লুইপাদ-প্রসাদের উল্লেখ করেছেন (৩৪ নং পদ)।
আরো পড়ুন : চৌরাশী সিদ্ধা
লুইপাদ ও মীননাথ একই ব্যক্তি না স্বতন্ত্র
যদিও তাঞ্জুর তালিকায় লুইপাদকে মৎস্যেন্দ্রনাথ থেকে স্বতন্ত্র বলে ঘোষণা করা হয়েছে, তবু অনেকেই লুই-মৎস্যেন্দ্র-মীননাথকে অভিন্ন মনে করেন৷ মীননাথের জীবনের সঙ্গে লুইপাদের জীবনের কিছু মিলও আছে ৷ অদ্বয়বজ্রকৃত সরহের দোহাকোষ পঞ্জিকায় লুইপাদকে বলা হয়েছে ‘কৈবর্ত’ ৷ কিন্তু সংশয় জাগে–লুইপাদের উপাধি ‘পাদ’, আর মীনের উপাধি ‘নাথ’ ৷ সম্প্রদায় ভিন্ন। টীকাকার মুনিদত্তও মীননাথের দর্শনকে বলেছেন ‘পরদর্শন’ (চর্যাটীকা ২১)৷ প্রকৃতপক্ষে নাথথর্মের সঙ্গে সহজিয়া বৌদ্ধধর্মের মিলের জন্য হয়তো দুই সম্প্রদায়ের আচার্যদ্বয় পরবর্তীতে এক হয়ে গিয়েছেন।
লুইপাদ-এর রচনা
লুইপাদ বৌদ্ধ আচার্য ৷ তাঞ্জুর তালিকায় তাঁর নামে যে গ্রন্থগুলির উল্লেখ পাওয়া যায়, তার সবগুলিই বৌদ্ধ-দর্শন সংক্রান্ত ৷ দোহাকোষ ও চর্যাপদ বাদে তিনি লিখেছেন —
১. ‘ভগবদভিসময়’,
২. ‘অভিসময়বিভঙ্গ’,
৩. ‘বুদ্ধোদয়’
৪. ‘বজ্রসত্ত্বসাধন’।
লুইপাদের নামে চর্যাগীতিতে ২ টি গান সংগৃহীত হয়েছে ১ নং ও ২৯ নং পদ।
★ ১ নং পদ — ‘কাআ তরুবর পঞ্চ বি ডাল।’
★ ২৯ নং পদ — ‘ভাব ন হোই অভাব ণ জাই।’
অসাধারণ, আরো পড়তে চাই
🙏🙏🙏🙏🙏
নিয়মিত লেখা 'অদ্যতন-প্রবিষ্ট' (Up to date) করা হয়। কিছু চর্যাকবির পোস্ট করা হয়েছে। আরো ভবিষ্যতে সমস্ত কবির পরিচিতি থাকবে। কমেন্টের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।