শবরীপাদ  শবরপাদ শবর পা


নামের অর্থ

লুইপাদের গুরু মহাসিদ্ধ শবরী। ইনি রসসিদ্ধ নাগার্জুনের শিষ্য। তারানাথের বিবরণে শবরী ছিলেন বঙ্গের এক নটাচার্য। নাগার্জুন তাকে শ্রীপর্বতে যাবার নির্দেশ দেন। সেখানে তিনি শবরসুলভ জীবন যাপন করেন এবং শবরীশ্বরবা সিদ্ধ শবরী’ নামে পরিচিত হন। তন্ত্রমতে শবরবা সবরঅর্থ বজ্রধর । ইনি কনিষ্ঠ সরােহ (‘younger saroha’-Dr. B. D. Natta) নামেও পরিচিত।  শবর পা অষ্টম শতাব্দীর শেষভাগ থেকে নবম শতাব্দীর প্রথমার্ধের সময়কালের মহাসিদ্ধ ছিলেন। তিব্ববতী ঐতিহ্যানুসারে তিনি বঙ্গাল দেশের পর্বতবাসী একজন ব্যাধ ছিলেন।


[ads id=”ads1″]


রচনা

তাঞ্জুর তালিকামতে, সিদ্ধ শবরীপাদ বজ্রযােগিনী-সাধনসংক্রান্ত কতিপয় গ্রন্থ রচনা করেন। ষড়ঙ্গ যােগের উপরেও তাঁর রচনা আছে। তিনি আচার্যমহাচার্যবিশেষণেও বিশেষিত। শবরপাদের নামে দুটি চর্যাগীতি (২৮, ৫০) পাওয়া যায়। 

ডঃ সুকুমার সেন মনে করেন, যে ভাবে ‘শবর’ পদটি চর্যায় আছে, তাকে ভনিতা বলে মনে করা অনুচিত। গীতশীর্যে ও টীকায় কিন্তু গান দুটি শবরপাদের রচনা বলে স্বীকৃত হয়েছে। শবরপা -এর নামে পদ দুটি হলো–

[১] উঁচা উঁচা পাবত তহিঁ বসই সবরী বালী (২৮ নং)

[২] গঅণত গঅণত তইলা বাড্‌হী হেঞ্চে কূরাঢ়ী (৫০ নং) 


আলোচনা 

শবরীপাদের দুটি গানই লৌকিক শবর-শবরী-জীবনের সজীব জীবনালেখ্য। দুটি গানেই কৃষি-নির্ভর পার্বত্য জীবনের স্ত্রী-স্বাধীনতা, ভুজঙ্গ নায়কের পরকীয়া আসক্তি, পুষ্পপ্রিয়া আরণ্য নারীর কুসুম-সজ্জা এবং সম্ভোগ-শৃঙ্গারের আনন্দ-উল্লাস অভিব্যক্ত। সম্ভোগ-শৃঙ্গারের চিত্রে কামশাস্ত্রের অভিজ্ঞান সুস্পষ্ট। কামের উপকরণ তাম্বুল-কর্পূর ও সুন্দরী নারী তাে আছেই, সেই সঙ্গে আছে শৃঙ্গারের উদ্দীপন বিভাবরূপে সুন্দর প্রকৃতি চিত্র। 

২৮ সংখ্যক গানে ‘নানা তরুবর মৌলিলরে গঅণত লাগেলি ডালীপংক্তিতে পাওয়া যায় সুন্দর বসন্ত-চিত্র, আর ৫০ সংখ্যক গানে এসেছে শুভ্র সদ্যস্ফুট কাপাস পুষ্পের বর্ণের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা করে জ্যোৎস্না-স্নাত ‘জোহ্না বাড়ি’র বর্ণনা। সাধকের শিল্প-দৃষ্টি এখানে আবরিত। শবর (বজ্র)-সাধনের সঙ্কেত দ্যোতনায় কবি দেশজ শাবরী (শবর-ব্যবহৃত) ভাষাকে উপেক্ষা করেন নি। মাের (ময়ূর), গুঞ্জরী (গুঞ্জা), গুহাড়া, গুলী, ঘাট, তাবােলা (তাম্বুল ২৮), এবং বাড্হি‌ (বাড়ি), কুরাঢ়ী (কুঠারী), দুন্দোলী, কপাসু (কার্পাস), কঙ্গুচিনা (৫০) — প্রভৃতি দেশজ শব্দচয়নেও সাধক-কবি সতর্ক। 


[ads id=”ads2″]


শবরীপাদের গানের রাগ ‘বলাড্ডি (২৮), ও ‘রামক্রী‘ (৫০)। ছন্দে, ছন্দ-স্তবকে এবং চরণবিন্যাসেও শবরীপাদের গানে বৈশিষ্ট্য রয়েছে। প্রমুক্ত মনের ছন্দ বন্ধনহীন, তার গতি স্বচ্ছন্দ। চর্যাগানগুলি প্রায়শঃ পঞ্চপদী (দশচরণের কবিতা), কিন্তু শবরীপাদের দুটি গানই সপ্তপদী। মিশ্র ছন্দের প্রয়ােগেও তা বিচিত্র।




সাহায্য : জাহ্নবীকুমার চক্রবর্তী


আরো পড়ুন :  সরহপাদ সরহ পা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *