কবি কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার প্রকাশকাল নিয়ে একসময় যে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছিল, তার স্থায়ী মীমাংসা করে দিয়ে গেছেন স্বয়ং মুজাফফর আহমেদ। তাঁর স্বীকারোক্তির পর এই কবিতার প্রকাশকাল বিষয়ক সমস্ত বিতর্কের অবসান হয়েছে বলে মনে হয়।
বিদ্রোহী কবিতা প্রথম কোন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়
‘বিদ্রোহী’, কাজী নজরুল ইসলামের এই একটি মাত্র কবিতা বাংলা সাহিত্যের কত না আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই কবিতাটির জন্য কবির ভাগ্যে সুনাম/দুর্নাম দুইই জুটেছিল। ১৪৩ পঙক্তির সমিল মুক্তক মাত্রাবৃত্ত ছন্দে এই সুদীর্ঘ কবিতা রচনা করেই নজরুল রাতারাতি বিখ্যাত হয়ে উঠেছিলেন।
কবিতাটি কোন পত্রিকায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল তা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল একসময়, যদিও কবিবন্ধু মুজাফফর আহমেদ সেই বিতর্কের অবসান ঘটিয়েছেন। কবিতাটি প্রথম ‘বিজলী’ না ‘মোসলেম ভারত’ কোথায় প্রথম প্রকাশিত হয়েছে তা নিয়েই যত বিতর্ক। দেখে নেওয়া যাক উল্লিখিত দুটি পত্রিকার কবিতার প্রকাশসাল—
- ক. বিজলী—২২ পৌষ ১৩২৮ ব. [৬ জানুয়ারি ১৯২২]
- খ. মোসলেম ভারত—কার্তিক ১৩২৮ ব.[নভেম্বর ১৯২১]
পত্রিকার পাতায় এই প্রকাশকাল দেখে অনেকেই ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকাকেই কবিতা ছাপানোর কৃতিত্ব দিয়েছেন। কিন্তু কবিবন্ধু মুজাফফর আহমেদ,কবিতা রচনার সময় তিনি কবির সংগেই ছিলেন, নিজের স্মৃতিকথায় জোর দিয়ে এই বক্তব্যের খণ্ডন করেছেন—
‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচিত হয়েছিল ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে।... ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রথম ছাপা হয়েছিল ‘বিজলী’ নামক সাপ্তাহিক কাগজে’।
একরাতেই রচিত কবিতাটির প্রথম শ্রোতা মুজাফফর আহমদ নিজে। পরদিন সকালে ‘মোসলেম ভারত’ পত্রিকার আফ্জালুল হক কবিতাটি শুনে ছাপাতে রাজি হয়েছিলেন এবং তাঁর পত্রিকার কার্তিক সংখ্যার [অর্থাৎ তাঁর পত্রিকার দেরিতে বেরুত] জন্য কপি নিয়ে গেলেন। সেদিনই ‘বিজলী’ পত্রিকার শ্রীঅবিনাশচন্দ্র ভট্টাচার্য কবিতার কথা শুনে এক কপি নিয়ে গেলেন। ৬ জানুয়ারি ১৯২২-এ বিজলীতে ছাপা হয়ে বেরুল কবিতাটি।
কবিতাটি মোসলেম ভারতে প্রকাশিত হলে কবিতাটির রচনাকাল নিয়েই প্রচণ্ড সন্দেহ জাগবে। কেননা কবিবন্ধু জোর দিয়েই বলেছেন, কবিতাটি ১৯২১-এর ডিসেম্বরেই রচিত। তাছাড়া কবিতাটির জনপ্রিয়তার জন্য বিজলী পত্রিকা আবার পুনর্মুদ্রিত হয়েছিল কয়েকদিনের ব্যবধানে, যা হয়তো পত্রিকার ইতিহাসে কখনো ঘটেনি। যদি ধরে নিই ‘বিজলী’র পূর্বে ‘মোসলেম ভারতে’ই প্রকাশিত হয়েছে ঐ কার্ত্তিক সংখ্যাতেই তাহলে তার ২ মাস পর ‘বিজলী’তে প্রকাশের পর এত জনপ্রিয় হল যে পুনর্মুর্দ্রনের প্রয়োজন পড়ল ! মোসলেম ভারত পত্রিকা তো অখ্যাত ছিল না।
এখন মুজফ্ফর আহ্মদের স্মৃতিকথামূলক বই থেকে প্রাসঙ্গিক বক্তব্য উদ্ধার করা হলো –
…এইভাবে ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ বা খ্রীস্টমাস সপ্তাহ এসে যায়। ব্রিটিশ আমলে এই সময়ে স্কুল-কলেজ ও অফিস-আদালত কয়েক দিনের ছুটি হতো। খ্রীস্টানদের এটা বড় দিন ব’লে সাধারণভাবে এই ছুটিকে বড়দিনের ছুটি বলা হতো। এই সময়ে নজরুল ইসলাম রচনা করল তার বিখ্যাত “বিদ্রোহী” কবিতা।
মুজফ্ফর আহ্মদ, কাজী নজরুল ইসলাম : স্মৃতিকথা (১৯৬৫), ন্যাশনাল বুক এজেন্সি প্রাইভেট লি., কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। পৃ. ২২৬ – ২৩১
“বিদ্রোহী” কবিতা রচনার বিবরণ দেওয়ার আগে আমার একটা ব্যক্তিগত কৈফিয়ৎ দেওয়া একান্ত প্রয়োজন। আমি আমার “কাজী নজরুল প্রসঙ্গে” নামক পুস্তকে লিখেছি যে ১৯২১ কৈফিয়ৎ সালের দুর্গাপূজার কাছাকাছি সময়ে (তার আগের বা পরের কোনো মাসে) নজরুল ইসলাম তার “বিদ্রোহী” কবিতা রচনা করেছিল। এটা সম্পূর্ণরূপে ভুল তথ্য। এই তথ্য পরিবেশন করে আমি বড় অন্যায় কাজ করেছি। নজরুল তখন আমার সঙ্গে থাকত ব’লে সকলে আমার দেওয়া তথ্যকেই সঠিক তথ্য হিসাবে ধ’রে নিয়েছেন। নজরুলের চরিতকাররাও এই তথ্যই তাঁদের আপন আপন পুস্তকে লিখেছেন। ধরতে গেলে সমস্ত বাঙলা দেশের (পাকিস্তানসহ) মাথার ভিতরেই আমি একটি ভুল তথ্য ঢুকিয়ে দিয়েছি। ভুল তথ্য তো আমি এখানে নিশ্চয় সংশোধন করে দেব, কিন্তু আমাকে দিয়ে যে অন্যায় কাজটি হয়ে গেছে তার প্রতিকার যে কি করে হবে আমি তা জানিনে। আরও কিঞ্চিৎ সাবধান হলে আমার এ ভুল হতো না। এই অসাবধানতার জন্যে আমি মর্মান্তিকরূপে দুঃখিত।
আসলে “বিদ্রোহী” কবিতা রচিত হয়েছিল ১৯২১ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে। সব হিসাব খতিয়ে এবং সমসাময়িক ঘটনার সঙ্গে মিলিয়ে বেরিয়ে আসছে যে এটাই ছিল কবিতাটির রচনার সময়। শুধু একটি ঘটনাকে আমি নজরে রেখেছিলেম বলেই আমার এই ভুলটা হয়েছিল। “বিদ্রোহী” কবিতা প্রথম ছাপা হয়েছিল “বিজলী” নামক সাপ্তাহিক কাগজে। সেই সময়ে বৃষ্টি হয়েছিল। এই বৃষ্টিটাই আমার স্মৃতিতে আটকে ছিল। তা থেকে সঙ্গে সঙ্গে মনে এসেছিল যে বৃষ্টি হওয়া সম্ভব তো শরৎকালেই। এই কথা মনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই দুর্গাপূজার আগের কিংবা পরের মাসের কথা মনে উদয় হয়েছিল। সেই সময়ে যদি পুরনো “বিজলী” হাতের কাছে পেতাম তবে আমার ভুলটা কিছুতেই হতো না। তা হলে এটাও আমার মনে আসত যে কোনো কোনো বছর শীতকালেও বৃষ্টি হয়।
আমাদের ৩/৪-সি তালতলা লেনের বাড়ীটি ছিল চারখানা ঘরের একটি পুরো দোতালা বাড়ী। তার দোতালায় দুখানা ঘর ও নীচের তলায় দু’খানা ঘর ছিল। পুরো বাড়ীটি ভাড়া নিয়েছিলেন ত্রিপুরা জিলার পশ্চিমগাঁর নওয়াব ফয়জুন্নিসা চৌধুরানীর নাতিরা (দৌহিত্ররা)। তাঁরা নীচের দু’খানা ঘর আমাদের ভাড়া দিয়েছিলেন। কিছুদিন পরে নীচেরও একখানা ঘরের তাঁদের দরকার হয়। তখন নজরুল আর আমি নীচের তলার পুর দিকের, অর্থাৎ বাড়ীর নীচেকার দক্ষিণ-পূর্ব কোণের ঘরটি নিয়ে থাকি। এই ঘরেই কাজী নজরুল ইসলাম তার “বিদ্রোহী” কবিতাটি লিখেছিল। সে কবিতাটি লিখেছিল রাত্রিতে। রাত্রির কোন সময়ে তা আমি জানিনে। রাত দশটার পরে আমি ঘুমিয়ে পড়েছিলেম। সকালে ঘুম থেকে উঠে মুখ ধু’য়ে এসে আমি বসেছি এমন সময়ে নজরুল বলল, সে একটি কবিতা লিখেছে। পুরো কবিতাটি সে তখন আমায় পড়ে শোনাল। “বিদ্রোহী” কবিতার আমিই প্রথম শ্রোতা। কিন্তু নিজের সম্বন্ধে আমি কী যে বলব তা জানিনে। কোনো দিন কোনো বিষয়ে আমি উচ্ছ্বসিত হয়ে পারি না। যে-লোক প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য তার সামনা-সামনি তাকে প্রশংসা করাও আমাকে দিয়ে হয়ে উঠে না। তার অগোচরে অবশ্য আমি তার প্রশংসায় মুখর হয়ে উঠি। আমার এই স্বভাবের জন্যে আমি পীড়া বোধ করি বটে, তবুও স্বভাব আমার কিছুতেই বদলাল না। নজরুল তার জীবনের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি আমাকেই প্রথম পড়ে শোনাল, অথচ, আমার স্বভাবের দোষে না পারলাম তাকে আমি কোনো বাহবা দিতে, না পারলাম এতটুকুও উচ্ছ্বসিত হতে। কী যে কথা আমি উচ্চারণ করেছিলেম তা এখন আমার মনেও পড়ছে না। আমার স্বভাবটা যদিও নজরুলের অজানা ছিল না তবুও সে মনে মনে আহত যে হয়েছিল তাতে সন্দেহ নেই। আমার মনে হয় নজরুল ইসলাম শেষ রাত্রে ঘুম থেকে উঠে কবিতাট লিখেছিল। তা না হলে এত সকালে সে আমায় কবিতা পড়ে শোনাতে পারত না। তার ঘুম সাধারণত দেরীতেই ভাঙত, আমার মত তাড়াতাড়ি তার ঘুম ভাঙত না। এখন থেকে চুয়াল্লিশ বছর আগে নজরুলের কিংবা আমার ফাউন্টেন পেন ছিল না। দোয়াতে বারে বারে কলম ডোবাতে গিয়ে তার মাথার সঙ্গে তার হাত রাখতে পারবে না, এই ভেবেই সম্ভবত সে কবিতাটি প্রথমে পেন্সিলে
লিখেছিল।
সামান্য কিছু বেলা হতে ‘মোসলেম ভারতে’র আফ্জালুল হক সাহেব আমাদের বাড়ীতে এলেন। নজরুল তাঁকেও কবিতাটি পড়ে শোনাল। তিনি তা শুনে খুব হইচই শুরু করে দিলেন, আর বললেন, “এখনই কপি ক’রে দিন কবিতাটি, আমি সঙ্গে নিয়ে যাব।” পরম ধৈর্যের সহিত কবিতাটি কপি ক’রে নজরুল তা আফ্জাল সাহেবকে দিল। তিনি এই কপিটি নিয়ে চলে গেলেন। আফ্জালুল হক সাহেব চ’লে যাওয়ার পরে আমিও বাইরে চলে যাই। তার পরে বাড়ীতে ফিরে আসি বারোটার কিছু আগে। আসা মাত্রই নজরুল আমায় জানাল যে “অবিনাশদা (বারীন ঘোষেদের বোমার মামলার সহবন্দী শ্রীঅবিনাশচন্দ্র ভট্টাচার্য) এসেছিলেন। তিনি কবিতাটি শুনে বললেন”, “তুমি পাগল হয়েছ নজরুল, আফ্জালের কাগজ কখন বা’র হবে তার স্থিরতা নেই, কপি ক’রে দাও “বিজলী”তে ছেপে দিই আগে।” তাঁকেও নজরুল সেই পেন্সিলের লেখা হতেই কবিতাটি কপি ক’রে দিয়েছিল। ১৯২২ সালের ৬ই জানুয়ারী (মুতাবিক ২২শে পৌষ, ১৩২৮ বঙ্গাব্দ) তারিখ, শুক্রবারে “বিদ্রোহী” “বিজলী”তেই প্রথম ছাপা হয়েছিল। বৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও কাগজের চাহিদা এত বেশী হয়েছিল যে শুনেছিলেম সেই সপ্তাহের কাগজ দু’বার ছাপা হয়েছিল। অনেকে যে লিখেছেন “বিদ্রোহী” “মোসলেম ভারতে” প্রথম ছাপা হয়েছিল সেটা ভুল। আফ্জাল সাহেব কার্তিকের “মোসলেম ভারতে”র জন্যে যখন কপি নিয়ে গিয়েছিলেন তখন পৌষ মাস ছিল। আমার ধারণা, তাঁর কার্তিক সংখ্যা ফাল্গুন মাসের আগে বা’র হয়নি। ‘মোসলেম ভারত’ নিয়মিত বা’র হত কিনা সেটা আজ যাঁরা নজরুল সম্বন্ধে লিখছেন তাঁরা কি ক’রে বুঝবেন। তাঁরা দেখতে পাচ্ছেন কার্তিক (১৩২৮) মাসের “মোসলেম ভারতে” “বিদ্রোহী” ছাপা হয়েছিল, আর ছাপা হয়েছিল ২২শে পৌষের (১৩২৮) “বিজলী”তে। কাজেই তাঁদের পক্ষে এটাই ধরে নেওয়া হিসাব সঙ্গত যে “মোসলেম ভারতে”ই “বিদ্রোহী” প্রথম ছাপা হয়েছিল। আসলে কিন্তু পৌষ মাসের (ডিসেম্বর, ১৯২১ মাসের শেষ সপ্তাহের) আগে নজরুল ইসলাম তাঁর ‘বিদ্রোহী’ কবিতা রচনাই করে নি। কাজেই, “বিদ্রোহী” প্রথম ছাপানোর সম্মান সাপ্তাহিক ‘বিজলী’রই প্রাপ্য। তবে, কবিতাটি কার্তিক সংখ্যার “মোসলেম ভারতে” ছাপানোর জন্যেই নজরুল প্রথমে আফজালুল হক সাহেবকে দিয়েছিল। সেই জন্যে এই কার্তিক সংখ্যার “মোসলেম ভারতে”র নামোল্লেখ করেই “বিজলী” কবিতাটি প্রথম ছেপেছিল, যদিও কার্তিক মাসের “মোসলেম ভারত” কখন ছাপা হবে তা কেউ সেই পৌষ মাসেও জানতেন না।
আবার শ্রীঅবিনাশচন্দ্র ভট্টাচার্যও “মাসিক বসুমতী”তে (কার্তিক, ১৩৬২) পুরানো কথা লিখতে গিয়ে ঘটনা সম্পর্কে খানিকটা তালগোল পাকিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন পেন্সিলে লেখা কবিতাটি নিয়ে শুধু তাঁকে শোনাবার জন্যেই নজরুল তাঁদের প্রেসে গিয়েছিল। তিনিই জোর ক’রে কবিতাটি “বিজলী”র জন্যে রেখে দেন। এই বিষয়ে নজরুল আমায় যা বলেছিল তা আমি ওপরে লিখেছি। অবিনাশবাবু বলছেন নজরুল পড়ছিল, আর তিনি তার শ্রুতিলিখন করছিলেন। নজরুল কখনও এইভাবে কবিতা ছাপতে দিতনা। সে নিজ হাতে কপি ক’রে কবিতা ছাপতে দিত। “বিদ্রোহী”র বেলায়ও সে পেন্সিলের লেখা হতে নিজে কালিতে লিখে সেই কপি অবিনাশবাবুকে দিয়েছিল। ঘটনার চৌত্রিশ বছর পরে এই সম্বন্ধে লিখতে গিয়ে তাঁর স্মৃতি তাঁকে বিভ্রমে ফেলেছিল। আসলে অবিনাশবাবু নজরুলের আপন হাতের কপি করা “বিদ্রোহী” কবিতা “বিজলী”তে ছাপতে নিয়ে গিয়েছিলেন। নজরুল আমায় তাই বলেছিল। তিনি পেন্সিলের লেখা যে দেখেছিলেন সে কথা ঠিকই। আবার কোনো এক কাগজে (আমি নিজে পড়িনি) শ্রীনলিনীকান্ত সরকার নাকি লিখেছিলেন যে “বিদ্রোহী” কবিতা “বিজলী”তে ছাপানোর জন্যে তিনিই নজরুলের নিকট হতে নিয়ে গিয়েছিলেন। আসলে নিয়েছিলেন তো অবিনাশ বাবুই, কিন্তু শ্রীনলিনীকান্ত সরকারের হঠাৎ মনে এসেছিল যে তিনিই যখন নজরুলের অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন এবং “বিজলী”তেও ছিলেন তখন তাঁরই তো “বিদ্রোহী” কবিতা “বিজলী”র জন্যে নিয়ে যাওয়ার কথা। এই কথা মনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি কথাটা কাগজে ছেপে দিয়েছিলেন। এই ভাবেই স্মৃতি মানুষের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে।
‘বিদ্রোহী’ ছাপা হওয়ার পরে রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে নজরুলের সাক্ষাৎকারের কথাও শ্রীঅবিনাশচন্দ্র ভট্টাচার্য লিখেছেন এবং নজরুলের মুখে শুনেই লিখেছেন। তাতে আছে, কবিতাটি রবীন্দ্রনাথকে পড়ে শোনানোর পরে তিনি নজরুলকে বুকে চেপে ধরেছিলেন। নজরুল আমাকে এই খবর দেয় নি। তবে, আমাকে কথাটা না বলার কারণ হয়তো এই ছিল যে আমি তার কবিতার প্রথম শ্রোতা হয়েও কোনো আনন্দোচ্ছ্বাস প্রকাশ করিনি। অবিনাশবাবু লিখেছেন, ঠাকুর বাড়ীতে গিয়ে নজরুল নীচে থেকেই “গুরুজী, গুরুজী” বলে চেঁচিয়েছিল। অবিনাশ বাবু হয়তো ভুল বুঝেছিলেন। রবীন্দ্রনাথকে কেউ “গুরুজী” ডাকতেন না, ডাকতেন “গুরুদেব”।
শ্রীঅবিনাচশন্দ্র ভট্টাচার্য আজ আর আমাদের মধ্যে বেঁচে নেই।…
এখন ‘বিজলী’ পত্রিকাকেই ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রথম ছাপানোর কৃতিত্ব দেওয়া হয়ে থাকে যা সঠিক। প্রকাশকাল–বিজলী—২২ পৌষ ১৩২৮ ব. [৬ জানুয়ারি ১৯২২]। আলোচ্য ২টি পত্রিকা ছাড়াও প্রবাসী ও দৈনিক বসুমতীতে এই কবিতাটি ছাপা হয়েছিল। এর থেকেই বোধহয় আন্দাজ করা যায় কবিতাটি কত জনপ্রিয় হয়েছিল।
বইটির পিডিএফ ডাউনলোড লিংক কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতিকথা