নাট্যকার তারাশঙ্কর, একটি সংক্ষিপ্ত বিরল আলোচনা, লিখেছেন সুব্রত সরকার
তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমরা মূলত বিখ্যাত ঔপন্যাসিক ও ছোটগল্পকার হিসেবেই জেনে এসেছি। কিন্তু তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় নাটক লেখাতেও হাত পাকিয়েছেন। কিন্তু সেভাবে জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হননি। প্রথম জীবনে তাঁর নাট্যকার হবার বিরাট স্বপ্ন ছিল, কিন্তু সেভাবে সফলতা লাভ করতে পারেননি। নাট্যভিনয়ের সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয় সাত বছর বয়সে তবে তা দর্শক হিসেবে।
তারাশঙ্কর তৃতীয় পানিপথের যুদ্ধ অবলম্বনে প্রথম একটি নাটক লেখেন। নাটকটির নাম “মারাঠাতর্পণ“। “আমার সাহিত্য জীবন” গ্রন্থে এ নাটক সম্পর্কে লিখেছেন –
"নাটক আমাদের রঙ্গমঞ্চে অভিনীত হল। নাটকখানি মঞ্চে আশ্চর্যরকম জমে গেল"
"অভিনয়ের পর নির্মলশিব বাবু বললেন, নাটকখানিকে ভাল নকল করে আমাকে দে আমি কলকাতায় দেখাব। আর্ট থিয়েটারে দেব।"
আর্ট থিয়েটারের অধ্যক্ষ অপরেশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় অবশ্য সে পাণ্ডুলিপি না পড়েই ফিরিয়ে দেন। এতে তারাশঙ্কর খুব ব্যথিত হন। তিনি বলেন –
"... এই আঘাত আমার মুখ ফিরিয়ে দিলে রঙ্গমঞ্চ এবং নাটকের পথ থেকে; নাটক আর লিখবো না স্থির করলাম।"
তারাশঙ্করের নাটকের সংখ্যা প্রায় কুড়িটি। এর মধ্যে এগারোটি গ্রন্থাকারে মুদ্রিত। নামতালিকার পাশাপাশি নাটকগুলির অঙ্ক সংখ্যা দেওয়া হলো-
- কালিন্দী (চার অঙ্ক)
- দুই পুরুষ (চার অঙ্ক)
- পথের ডাক (চার অঙ্ক)
- দ্বীপান্তর (চার অঙ্ক)
- বিংশ শতাব্দী (তিন অঙ্ক)
- চকমকি (দুই অঙ্কের প্রহসন)
- যুগবিপ্লব (তিন অঙ্ক)
- কবি (চার অঙ্ক)
- কালরাত্রি (একাঙ্ক নাটক)
- সংঘাত (তিন অঙ্ক)
- আরোগ্য নিকেতন (চার)
এছাড়া ‘উমানন্দের মন্দির’, ‘ডাইনির মায়া’, ‘অভিশপ্ত’ প্রভৃতি একাঙ্ক নাটকগুলি বেতারে অভিনয়ের জন্য রচনা করেছিলেন। যেগুলির পাণ্ডুলিপি বর্তমানে দুষ্প্রাপ্য। “বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা” একাঙ্ক নাটকটি ডঃ সাধনকুমার ভট্টাচার্য ও ডঃ অজিতকুমার ঘোষ সম্পাদিত “একাঙ্ক সঞ্চয়ন”(১৯৬০) এর অন্তর্ভুক্ত।
তারাশঙ্করের কয়েকটি নাটক মঞ্চস্থ হয়েছিল এবং দু-একটি সফলতা অর্জন করেছিল। নাটকগুলি যেখানে মঞ্চস্থ হয়েছিল তার ছোট্ট তালিকা করলাম –
- কালিন্দী – নাট্যনিকেতনে এবং স্টার রঙ্গমঞ্চে
- দুই পুরুষ – নাট্যভারতীতে
- পথের ডাক – নাট্যভারতীতে
- দ্বীপান্তর – কালিকা থিয়েটারে
- বিংশ শতাব্দী – রঙমহলে
- কবি – রঙমহলে
- আরোগ্য নিকেতন – বিশ্বরূপা মঞ্চে
তিনি দু-চারটি নাটক উৎসর্গও করেছিলেন। সেগুলিও তুলে ধরলাম।
- পথের ডাক – জগদীশ ভট্টাচার্য
- দ্বীপান্তর – দেবীপ্রসাদ রায়চৌধুরী
- কবি (নাট্যরূপ) – মোহিতলাল মজুমদার
- দুই পুরুষ – শান্তিশঙ্কর মুখোপাধ্যায় / সনৎকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় / সরিৎকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়
- চকমকি – শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়
তিনি স্বরচিত গল্পের নাট্যরূপও দিয়েছিলেন। তাঁর “নুটু মোক্তারের সওয়াল” গল্পটির নাট্যরূপ “দুই পুরুষ”। পিতা-পুত্র গল্পটি “সংঘাত” নাটকের আদিবীজ। “দ্বীপান্তর” নাটকের শেষাংশ “আখড়াইয়ের দীঘি” গল্পটিকে স্মরণ করায়।
লিখেছেন - সুব্রত সরকার, ইমেল - [email protected]