কল্কা (কলকা)

চুম্বক :

কল্কা শব্দের উৎস ও অর্থ
কল্কার ব্যবহার
কল্কার বিভিন্ন নাম



“কল্কাপাড়ের নীলশাড়ি” এই শব্দগুচ্ছের সঙ্গে এমন কোনো বাঙালি নেই যে তার পরিচয় ঘটেনি।

বাংলার হস্তশিল্পে কল্কা একটি সুপরিচিত নকশা। কিসে নেই এই কল্কা—  আলপনায়, আমসত্ত্ব-সন্দেশের ছাঁদে, কাঠের কাজের, মূর্তির চালে, শোলা-রাংতা, আংটির কাজে, ধাতু পাত্রের খোদাই কাজে, কাঁথায়, জামদানি, বালুচরী, শান্তিপুরী, ধনেখালি শাড়ীতে, ছাপা শাড়ি নকশায়।

উৎস অর্থ :

কলকা শব্দটি মূলত পারসিকরা ‘কলগা‘, যার অর্থ লাল ফুল অথবা ‘কল্গি‘, যার অর্থ পাখির পালক থেকে এসেছে। অন্য মতে সংস্কৃত ‘কলিকা‘ অর্থ ফুলের কুঁড়ি থেকে কলকা শব্দের উৎপত্তি। বেনারসি শাড়ির কারিগররা একে বলেন ‘কলঙ্গা‘। ইরানের শাহ আব্বাসের [১৫৮৬-১৬২৮] সময় পারসিক বস্ত্র ও কার্পেটে এটি খুবই জনপ্রিয় হয়। তখন একে বলা হতো শাহ-এর ফুল, দীর্ঘ জীবনের প্রতীক, অন্য নামে ‘মীরবোটা‘ বা ‘বোটে মীর‘।

এই বহুব্যবহৃত লোকপ্রিয় আলংকারিক মোটিফটির দেশকালের ব্যপ্তি বিষয়ে আজও শেষ কথা বলা যায় না। তবে সুদূর মধ্য ও পশ্চিম এশিয়া থেকে শুরু করে বাংলাদেশের পূর্ব-প্রান্ত অবধি খ্রিস্টজন্মের পূর্বকাল থেকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে মোটিফটি বর্তমান।

কল্কা (কলকা) [মূল ছবি : বাংলাপিডিয়া]
আরো পড়ুন :  খেলার ছড়া সংগ্রহ


কোথায় ব্যবহৃত হয় :


পারস্যের পার্থেনিয়ন রূপার পাত্র, প্রাক-ইসলাম সাসানীয় বস্ত্র, মধ্য-এশিয়ার উপজাতীয় কম্বল, পারসিক কার্পেট, কাশ্মীরি শাল, মোরাদাবাদি জয়পুরী ধাতুপাত্র, লক্ষ্ণৌয়ের চিকন, বেনারসি শাড়ি, ওড়না, জামেয়ার, বৃন্দাবনী ছাপা কাপড়, বাংলার কাঁথা, শাড়ি অলংকার ও আলপনার নকশায় কালানুক্রমিক ভাবে এই কলকা মোটিফের ব্যবহার। উত্তর ভারতের শিল্পবস্তু অলঙ্করণে কলকার ব্যাপক ব্যবহার মুঘল পরবর্তী যুগে ও তৎকালীন পারসিক বস্ত্র, কম্বল, কার্পেটে প্রচলিত ছিল। সম্ভবত এই কারণে দৃশ্যশিল্প ইতিহাসবিদরা কলকার উৎস ভারতীয়, এ তত্ত্বে বিশ্বাসী নন।

কলকার রূপভেদের বৈচিত্র‍্য এবং শিল্পী ও কারিগরদের রূপকল্প গঠনে কল্পনার বহুধা বিস্তৃতি রসিক দ্রষ্টার মনকে রসাপ্লুত করে। এর জ্যামিতিক রূপ যেন বীজ, পাতা, পালক, ফুলের পাপড়ি অথবা ফুলপাতায় ভরা কোনো নরম গাছ বা ডাল যার মাথাটুকু হেলে পড়েছে, সূক্ষ্ম অলংকরণের বিস্তারে এটিই হয়ে উঠেছে পুষ্পভোজী পাখি বা রাজমুকুটের পালকশোভা বা ‘তাজ’।

অন্য পরিচিতি :

গত শতকে ইউরোপে গত শতকে ইউরোপে ‘পেইসলে‘ নামক এক পশমবস্ত্র ব্যবসায়ী কাশ্মীরি শালে বড় বড় জটিল নকশার কলকা ব্যবহার করতে থাকেন। সে কারণে ইউরোপীয়দের কাছে কলকার পরিচিতি হল ‘পেইসলে‘ নকশা। আকৃতিতে কলকার তলাটি অর্ধবৃত্তাকারে গোলানো এবং উপরের দিকে ক্রমশ বক্রাকারে ক্রমহ্রস্বমান হওয়ায় পাশ্চাত্যে এটিকে ‘কোন’ (cone) বলা হয়। পাইন জাতীয় গাছের আঁশযুক্ত ফলের আকৃতি সদৃশ হওয়ায় একে পাইন ফল নকশা বলেও চিহ্নিত করা হয়।

তথ্য : বঙ্গীয় লোকসংস্কৃতি কোষ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *