লালন ফকির জন্মগ্রহণ করেছেন নদীয়া জেলার অন্তর্গত কুষ্টিয়া মহকুমার ভাঁড়ারা গ্রামে,১৭৭৪ খ্রিঃ। তাঁর মৃত্যুর পর ‘হিতকরী’ পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়, সেখান থেকে জানা যায় – তিনি মৃত্যুবরণ করেন ১৮৯০ খ্রিঃ। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ১১৬ বছর। লালন জাতিতে হিন্দু কায়স্থ ছিলেন, তাঁর উপাধি ছিল কর, কোনো কোনো মতে দাস। তিনি মুসলমান গৃহে লালিত পালিত হয়ে সিরাজ সাঁই নামক এক মুসলমান ফকিরের নিকট দীক্ষা নিয়েছিলেন।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লালনের অনেকগুলি গান সংগ্রহ করেছিলেন। কিন্তু প্রথমে মাত্র কুড়িটি গান ১৩২২ সনে প্রবাসী পত্রিকায়। বর্তমানে রবীন্দ্রনাথের সংগৃহীত গানগুলি রবীন্দ্র সদনে সংরক্ষিত আছে। রবীন্দ্র সদনে রক্ষিত গানের খাতা উর্দুর ন্যায় ডান দিক থেকে বাঁ দিকে লিখিত।খাতার শেষ পৃষ্ঠাই প্রথম পৃষ্ঠা রূপে গণ্য। “বাংলার বাউল ও বাউল গান” গ্রন্থের রচয়িতা উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য শিলাইদহ নিবাসী শ্রীযুত শচীন্দ্রনাথ অধিকারী মহাশয়ের কাছ থেকে জেনেছেন, সম্ভবত কুষ্টিয়া মহকুমার অন্তর্গত সেঁউরিয়ায় অবস্থিত লালন ফকিরের অাখড়া থেকে লালন ফকিরের গানের খাতা এনে বামাচরণ ভট্টাচার্য মহাশয়কে দিয়ে গানগুলি নকল করিয়ে নিয়েছিলেন। এই সংগ্রহে মোট ২৯৮ টি গান রয়েছে। লালন ফকিরের লোকমুখে সংগৃহীত অনেকগুলি গান অধ্যাপক মনসুরউদ্দীন সাহেবের সম্পাদিত “হারামণি”(দুই খণ্ড) নামক লোকসঙ্গীত গ্রন্থে স্থান পায়।
লালন ফকির |
উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য লালনের অনেক পদ সংগ্রহ করে তা থেকে ১৬০ টি গান তাঁর “বাংলার বাউল ও বাউলগান” গ্রন্থে প্রকাশিত করেছে।
শ্রীযুত মতিলাল দাশ মহাশয় লালন ফকিরের অাখড়ায় রক্ষিত গানের খাতা থেকে গান নকল করেন এবং সেই গানগুলি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাতে অর্পণ করেন। শ্রীযুত মহাশয়ের সংগ্রহে ৩৭১ টি গান ছিল। মতিলাল দাশ ও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সংগৃহীত গানগুলি মিলিয়ে “লালন গীতিকা” প্রকাশ হল। রবীন্দ্রনাথের সংগ্রহের মধ্যে শ্রীযুত দাশের সংগৃহীত গান ব্যতীত ৮৯ টি নতুন গান পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে লালন ফকিরের ৪৬২ টি গান স্থান পেয়েছে। কিন্তু একটা অদ্ভুত বিষয়, লালনের সুপ্রসিদ্ধ গান “খাঁচার ভিতর অচিন পাখী কেমনে আসে যায়” রবীন্দ্রনাথ ও মতিলাল কারোর সংগ্রহে পাওয়া যায়নি। এ গানটি উপেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্যের “বাংলার বাউল ও বাউল গান” গ্রন্থ থেকে গৃহীত।
——————————————————-
লেখক
———————————————————————-
[★★লেখা সম্পর্কে কোনো রিপোর্ট থাকলে জানান এখানে★★]
———————————————————————-
—————————————————————