সর্বজনীন, সার্বজনীন, সার্বজনিক । ব্যবহার


সর্বজনীন, সার্বজনীন, সার্বজনিক



একটি প্রচলিত ধারণা আছে যে, সার্বজনীন শব্দটি অশুদ্ধ। আমাদের ছাত্রদের সার্বজনীন শব্দটির অশুদ্ধি সংশোধনের দুঃসাধ্য দায়িত্বও প্রায়ই দেওয়া হয়৷ সার্বজনীন শব্দটি আদৌ অশুদ্ধ নয়। তবে সাধারণত যে অর্থে এটির প্রয়োগ হয়ে থাকে তা ঠিক নয়৷
সর্বজনেভ্য হিতঃ এই অর্থে সার্বজনিক বা সর্বজনীন লেখাই ভালো৷ সূত্রটি হল—সর্বজনাট্ ঠঞ খশ্চ৷ অর্থ, সর্বজনের হিত বা সর্বজনে বিদিত অর্থে ঠঞ বা খ (ঈন) প্রত্যয় হয়৷

পড়ুন : খ্রিস্ট/খৃষ্ট/খৃস্ট বানান বিভ্রাট

সর্বজন+ঈন এইভাবে সার্বজনীন শব্দটিও সিদ্ধ পাণিনির মতে৷ তবে হরিচরণ বন্দোপাধ্যায় ও রাজশেখর বসু সার্বজনীন শব্দের পৃথক অর্থ দিয়েছেন — ‘সর্বজনে সাধু’ (হরিচরণ বন্দোপাধ্যায়) ও ‘সকলের মধ্যে প্রবীণ বা শ্রেষ্ঠ’ (রাজশেখর বসু)। জ্ঞানেন্দ্রমোহন দাস অর্থের দিক থেকে সর্বজনীন ও সার্বজনীন এর মধ্যে কোনও পার্থক্য নির্দেশ করেননি৷

তবু আমাদের মনে হয় সকলের হিতের জন্য কৃত বা উদ্দিষ্ট অর্থে সর্বজনীন বা সার্বজনিক এবং সকলের মধ্যে প্রবীণ বা শ্রেষ্ঠ অর্থে সার্বজনীন লেখাই সংগত।  এই সব বিবেচনা করে নীচের প্রয়োগগুলিকে যথার্থ বলা যায়—
“সে যেন রসসৃষ্টির সার্বজনিক যজ্ঞ”– রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,  সাহিত্যে আধুনিকতা।
“যে সর্বজনীন শিক্ষা দেহের উচ্চশিক্ষার শিকড়ে রস জোগাইবে” — রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর , শিক্ষার বাহন, শিক্ষা।
 
“প্রেমের অনুভূতি সর্বজনীন”— বুদ্ধদেব বসু, মহাভারতের কথা (১৯৭৪) ১৪১ পৃঃ
এবং নীচের উদাহরণটিতে সার্বজনীন শব্দের প্রয়োগ যথার্থ নয় —
“রামেশ্বরবাবু আমার আবিষ্কৃত এই নিয়মটিকে ধূলিসাৎ করিয়া দিয়াছিলেন৷ অন্ততঃ নিয়মটি যে সার্বজনীন নয় তাহা অনুভব করিয়াছিলাম”— শরদিন্দু  বন্দ্যোপাধ্যায়, খুঁজি খুঁজি নারি, শরদিন্দু অমনিবাস, দ্বিতীয় খণ্ড।
— কারণ আমরা আগেই বলেছি সকলের হিতের জন্য উদ্দিষ্ট বা অনুষ্ঠিত এই অর্থে সার্বজনীন  শব্দটির প্রয়োগ অনুচিত।

আধুনিক বাংলা প্রয়োগ অভিধান 
আরো পড়ুন :  ভাষাবিজ্ঞান ও ভাষাতত্ত্ব, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগণ