বৈষ্ণব কবিদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়, ৫ম পর্ব

. রামানন্দ বসু

 
বর্ধমানের অন্তর্গত কুলীনগ্রামের মালাধর বসুর বংশজ (পৌত্র?) রামানন্দ বসু গৌরাঙ্গ পরিজন ছিলেন। প্রতি রথবাত্রার সময় কুলীন গ্রামের ভক্তদের নিয়ে রামানন্দ নীলাচলে যেতেন ও মহাপ্রভুর সান্নিধ্য লাভ করতেন। বসু রামানন্দের ভণিতায় বাংলা ও ব্রজবুলি পদগুলি উৎকৃষ্ট।

চৈতন্যপ্রসাদবঞ্চিত রামানন্দ দাস নামে আর একজন পদকর্তার পদ রামানন্দ ভণিতায় পাওয়া যায়। ইনি চৈতন্যোত্তর যুগের কবি।


. রায় রামানন্দ

 
উড়িষ্যার নৃপতি গজপতি প্রতাপ রুদ্রের রাজত্বকালে (১৪৮৯ – ১৫৪০ খ্রি.) অধীনস্থ বিদ্যানগরের প্রধান রাজপুরুষ ছিলেন রায় রামানন্দ। পিতার নাম ভবানন্দ রায়। গোদাবরী তীরে চৈতন্যদেবের সঙ্গে রামানন্দের সাক্ষাৎ হয়। রাজবৈভব ছেড়ে রামানন্দ চৈতন্যচরণে আত্মসমর্পণ করেন চৈতন্যদেবের অন্ত্যলীলার অন্তরঙ্গ পরিকর ছিলেন রায় রামানন্দ। রামানন্দের সংস্কৃত ভাষায় কৃষ্ণলীলা বিষয়ক নাটকটির নাম ‘জগন্নাথবল্লভ’ ব্রজবুলিপদটি চৈতন্যের সঙ্গে গোদাবরী তীরে সাধ্যসাধনতত্ত্ব আলোচনার শেষে রামানন্দ শুনিয়েছিলেন বলে চৈতন্যচরিতামৃতে উদ্ধৃত।
 


. রূপ গোস্বামী

 
গৌড়ের সুলতান হুসেন শাহের দবীরখাস্ বা একান্ত সচিব রূপ রামকেলিতে চৈতন্যদেবের সাক্ষাৎলাভের পর সংসার ত্যাগ করে চৈতন্যপদাশ্রয় গ্রহণ করেন এবং চৈতন্য-নির্দেশে অবশিষ্ট জীবন বৃন্দাবনে অতিবাহিত করেন। ‘হংসদূত’ ও ‘উদ্ধবসন্দেশ’ কাব্য রূপ গৌড়ে থেকেই রচনা করেন। বৃন্দাবনে রচনা করেন ‘বিদগ্ধমাধব’, ‘ললিতমাধব’, ‘দানকেলিকৌমুদী’ প্রভৃতি নাটক ; ‘ভক্তিরসামৃত-সিন্ধু’ ও ‘উজ্জ্বলনীলমণি’ প্রভৃতি রসশাস্ত্র ও গীতাবলীর অনেক গান। জয়দেবানুসারী গীতগুলিতে তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা সনাতনের ভণিতা থাকলেও গানগুলি যে আসলে রূপেরই রচনা এ সম্পর্কে সাক্ষ্য দিয়েছেন গানগুলির টীকায় রূপের ভ্রাতুষ্পুত্র শ্রীজীব গোস্বামী
 

. লোচন দাস

 
বর্ধমান জেলার অন্তর্গত মঙ্গলকোটের নিকট কোগ্রামে লোচন দাস বা ত্রিলোচন দাসের জন্ম। পিতার নাম কমলাকর দাস, মাতার নাম সদানন্দী। লোচনের বৈদ্যংশে জন্ম। নরহরি সরকার ছিলেন লোচনের দীক্ষাগুরু। নরহরির গৌরনাগর-বাদের প্রচারক ছিলেন লোচন দাস। ১৫৩৭ খ্রি. লোচন দাসের ‘চৈতন্যমঙ্গল’ কাব্য রচিত হয়। ছড়ার ছন্দে ধামালি জাতীয় পদরচনা লোচন দাসের পদাবলির বিশিষ্টতা।
 
 
—————————————————–
 

. শঙ্করদেব

 
আনুমানিক ১৪৬১ খ্রি. ব্রহ্মপুত্রের তীরস্থিত নওগাঁ জেলার বড়দোয়া গ্রামে কায়স্থ ভূস্বামীর গৃহে জন্ম। শঙ্করদেবের পিতার নাম কুসুমবর। আসামে বৈষ্ণর ভক্তি আন্দোলনের নেতা শঙ্করদেবের সঙ্গে সম্ভবতঃ নীলাচলে শ্রীচৈতন্যের সাক্ষাৎ হয়। শেষজীবন (১৫৬০-১৫৬৮ খ্রি.) শঙ্করদেব কামতার রাজা নবনারায়ণের আশ্রয়ে ছিলেন। শঙ্করের পদাবলীর সঙ্গে বিদ্যাপতির পদের যেমন সাদৃশ্য আছে তেমনি ব্রজবুলি পদের সঙ্গেও ঘনিষ্ঠ সংযাগে বর্তমান।
 

. শশিশেখর

 
কাঁদ্‌ড়া গ্রামের গোবিন্দানন্দ ঠাকুরের পুত্র শশিশেখর অষ্টাদশ শতকের পদকর্তাএঁর ভাই-এর নাম চন্দ্রশেখর। মতান্তরে শশিশেখর ও চন্দ্রশেখর এক ব্যক্তি। ‘নায়িকা রত্নমালাসংকলনে ১৪টি পদ শশিশেখরের রচনা। ব্রজবুলি রচনায় চন্দ্রশেখরও শশিশেখর উভয়েই সুনিপুণ। তবে চন্দ্রশেখরের গাম্ভীর্য বেশি কিন্তু শশিশেখরের তারল্য অধিক।
 

. শ্রীনিবাস আচার্য

 
ষোড়শ শতকের শেষদিকে ও সপ্তদশ শতকের প্রথম ভাগে বাংলাদেশে বৈষ্ণব সমাজের অন্যতম প্রধান নেতা শ্রীনিবাস আচার্য ছিলেন নদীয়ার চাখন্দী গ্রামের অধিবাসী। পিতার নাম গঙ্গাধর ভট্টাচার্য, মাতার নাম লক্ষ্মী। পিতৃবিয়োগের পর বৃন্দাবনে গোপাল ভট্টের কাছে শ্রীনিবাসের বৈষ্ণবধর্মে দীক্ষাও জীবের কাছে বৈষ্ণবশাস্ত্রে শিক্ষা হয়। পরে বাংলাদেশে ফিরে বৈষ্ণব সমাজের প্রধান আচার্য হয়েছিলেনরচনাকার্য অপেক্ষা প্রচারকার্যে বাংলাদেশে ফিরে তিনি তিনি উৎসাহী ছিলেনতাঁর নামে কয়েকটি বাংলা পদও পাওয়া যায়।
 

সাহ আকবর

পরিচয় অজ্ঞাত।
 

. সৈয়দ মতুর্জা

 
মুর্শিদাবাদ জেলার জঙ্গীপুরের নিকটবর্তী বালিয়াঘাটা নামক পল্লীতে কবির জন্ম। পিতা হাসান কাদেরী। কোন কোন মতে ইনি চট্টগ্রামের কবি। কবির নামে ২৮টি রাধাকৃষ্ণলীলা বিষয়ক পদ পাওয়া গেছে।
 

. হাম্বীর

 
বিষ্ণুপুরের মল্লভূমির অধিপতি বীর হাম্বীর শ্রীনিবাস আচার্যের নিকট বৈষ্ণব ধর্মে দীক্ষিত হন। দীক্ষান্তে তাঁর নাম হয় শ্রীচৈতন্যদাস। কালাচাঁদ বিগ্রহের প্রতিষ্ঠা করে ইনি নিজ রাজ্যে বৈষ্ণব ভক্তির প্রসার ঘটান। এঁর নামে দুএকটি ভাল পদ পাওয়া যায়।




—————————————————————————-
—————————————————————
ঋণ : দেবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়
—————————————————————
আরো পড়ুন :  শিক্ষাষ্টক / শিক্ষাশ্লোকাষ্টক [শ্রীচৈতন্যদেব]

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *