| | |

সোহারাব হোসেন সাহিত্যিক । পরিচিতি

সোহারাব হোসেন সাহিত্যিক



সোহারাব হোসেন [কথাসাহিত্যিক]

জন্ম – ২৫ নভেম্বর ১৯৬৬ খ্রি
মৃত্যু – ২ মার্চ ২০১৮ খ্রি

আমাদের পরবর্তীকালের লেখকদের ভিতর সোহারাব ছিল প্রতিভাবান। খুব কম সময়েই সরম আলির ভুবন, মহারণ এর মতো উপন্যাস লিখে ফেলেছিল।
একালের একজন প্রথিতযশা সাহিত্যিক অমর মিত্র এমনই মন্তব্য করেছিলেন সাহিত্যিক সোহারাব হোসেন সম্পর্কে। সত্যিই  সোহারাব হোসেন বেশ কম সময়েই বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে খ্যাতির চূড়া স্পর্শ করতে পেরেছিলেন। কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ সবকিছুতেই তাঁর লেখনি সচল ছিল।

প্রাথমিক পরিচিতি :
সোহারাব হোসেন প্রত্যন্ত গ্রামে জন্মেছেন। জন্ম ২৫ নভেম্বর ১৯৬৬ খ্রি: উত্তর ২৪ পরগণা জেলার মাটিয়া থানা অন্তর্গত সাংবেড়িয়া গ্রামে। সংসারে তিনি ছাড়া আআর ৩ জন ছিল — পিতা রুস্তম আলি, মাতা আমিনা বিবি এবং একমাত্র বোন সাবিনারা।

দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও পড়াশুনায় তাঁর কোনো খামতি ছিল না। গ্রামের পাঠশালা বেশ ভালো ভাবেই সমাপ্ত করে ভর্তি হলেন ধান্যকুড়িয়া উচ্চবিদ্যালয়ে। এখান থেকেও তাঁর আশানুরূপ ফল মিললো। এরপর ভর্তি হলেন পাশের বসিরহাট কলেজে, বাংলা বিষয়ে অনার্স নিলেন। তৎকালীন বাংলা বিষয়ের অধ্যাপক মানস মজুমদারের একজন স্নেহভাজন ছাত্র হয়ে উঠলেন সোহারাব। ভালো পরীক্ষা দিয়ে ওই কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হলেন। এরপর পাড়ি দিলেন কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে। উজ্জ্বল প্রতিভার অধিকারী সোহারাব সেখান থেকে ১৯৯১ এ এম.এ. তে প্রথম শ্রেনিতে প্রথম হলেন। এর মধ্যে ১৯৮৮ তে ‘দৈনিক বর্তমান’-এ তিনি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন।
এর পরবর্তীতে ছোটোগল্পের উপর পি.এইচ.ডি. করলেন এবং তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন মানস মজুমদার। তাঁর গবেষণাপত্রের নাম ছিল “বাংলা ছোটগল্পে ব্রাত্যজীবন।”

কর্মজীবনের প্রথম ধাপে যোগ দিলেন নিজের স্কুল ধান্যকুড়িয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে। এরপর কিছুদিন বসিরহাট কলেজে। শেষে যোগ দিলেন কলকাতার আনন্দমোহন কলেজে ১৯৯৬ এ।  ২০০৬ – ২০১০ এই পাঁচ বছর পশ্চিমবঙ্গের মাদ্রাসা বোর্ডের সভাপতি ছিলেন। কিন্তু পুনরায় সেই দায়িত্ব থেকে অবসর নিয়ে নিজের পুরোনো কলেজে যোগ দিয়েছিলেন।

আরও পড়ুন : সাহিত্যিক আফসার আমেদ

আরো পড়ুন :  সম্পাদক রবীন্দ্রনাথ, তত্ত্ববোধিনী পর্ব, তত্ত্ববোধিনী পত্রিকা ও রবীন্দ্রনাথ

লেখক সোহারাব :
সোহারাবের সাহিত্যিক সত্তার স্ফূরণ ঘটেছিল স্কুলজীবনেই। গ্রামের সাধারণ মানুষদের দেখে তিনি অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন তাদের জীবন-যাপনে। তাই তাঁর আখ্যানে প্রান্তিকায়িত মানুষের কন্ঠস্বর ধরা দিল।
লিটল ম্যাগাজিনগুলো তরুণ লেখকদের লেখা প্রকাশ করে তাদের সাহিত্যিক প্রতিভার প্রকাশে সুযোগ করে দিত। এইভাবেই সোহারাব হোসেন নিজেকে সাহিত্যিক হিসেবে পরিচিত করাতে পেরেছিলেন। এ প্রসঙ্গে সাহিত্যিক সাধন চট্টোপাধ্যায়ের স্মৃতি থেকে কিছু কথা উল্লেখ করা হলো,
আমাদের ঝোঁক ছিল মফস্বলে ঘুরে ঘুরে সাহিত্যপাঠ পরিচালনার মধ্যে দিয়ে, সম্ভাবনাময়  গদ্যকারদের সমাপ্ত করা এবং তাঁদের লাইম-লাইটে আনার প্রচেষ্টা। ….. আজ যাঁরা বাংলা গদ্যে নব্বই এর দশকের লেখক হিসাবে প্রতিষ্ঠিত, সিংহভাগই এই পক্রিয়ায় উঠে এসেছে। বুলেটিন [ কবি শৌভিক সম্পাদিত লিটল ম্যাগাজিন ] -এর আখ্যান চারটি পড়া শেষে, একজন কেন জানি আমাকে অদ্ভুত আকর্ষণ করেছিল। গল্পটির নাম ছিল ‘গাভীন সময়’। লেখক সোহারাব হোসেন।….. ‘গাভীন সময়’ আমাকে নাড়িয়ে দিল। টের পেলাম স্ফুলিঙ্গ লুকিয়ে আছে।
বাংলা সাহিত্য- এ ম্যাজিক রিয়ালিজম জাতীয় আখ্যান রচনায় তিনি স্বচ্ছন্দবোধ করতেন। বৃহৎ ক্যানভাসে তিনি লিখেছেন ‘মহারণ’ [২০০৩] , ‘সরম আলি ভুবন’ [২০০৪], ‘মাঠ জাদু জানে’ [২০০৪] প্রভৃতি উপন্যাস। উল্লিখিত উপন্যাস পাঠে এই প্রত্যয় হয় যে, লেখকের অধ্যয়নের জগৎ বেশ পরিব্যপ্ত ছিলো।
বাংলা সাহিত্যে সোহারাব হোসেনের ভবিষ্যৎ কী এ বিষয়ে সমালোচক বলেন –
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, অদ্বৈত মল্লবর্মন বা সোমেন চন্দর মতো কথাসাহিত্যিক সোহারাবের হায়াৎ পায়নি, তবু আজও তাঁরা জীবন্ত। সোহারাবও জীবিত থাকবে বলে আমার প্রত্যয়।
– সাধন চট্টোপাধ্যায়
কয়েকজন বিশিষ্টজনের মন্তব্য উদ্ধৃত করা হলো :
১। বামাচরণ মুখোপাধ্যায় [করুণা প্রকাশনীর কর্ণধার] –
অসম্ভব প্রতিভা ছিল সোহারাবের। বাংলা সাহিত্যে ওর প্রয়োজন ছিল। ছাত্রছাত্রীদের ওর প্রয়োজন ছিল।
২। সমালোচক তৌহিদ হোসেন [ সোহারাবের ছাত্র ] :
শুধু ত আর ল্রখক ছিলেন না, ছিলেন কথাসাহিত্যিক-বাউল। সাম্প্রদায়িক গোঁড়ামি, বহুজাতিকদের লুটপাঠ, সাংস্কৃতিক আগ্রাসন — সব কিছুর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের ডাক দিয়েছেন।


সোহারাব হোসেনের গ্রন্থ তালিকা

উপন্যাস
১। মহারণ – ২০০৩ করুণা প্রকাশনী
২। সরম আলির ভুবন – ২০০৪ ঐ
৩। মাঠ জাদু জানে – ২০০৪ ঐ
৪। সহবাস পরবাস – ২০০৭ ঐ
৫। রাজার অসুখ – ২০০৮ ঐ
৬। বদলি বসত – ২০০৯ ঐ
৭। সওকাত আলির প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি – ২০০৯ মিত্র ও ঘোষ

গল্পগ্রন্থ
১। দোজখের ফেরেশতা – ১৯৯৬ রত্নাবলী প্রকাশনী
২। বায়ু তরঙ্গের বাজনা – ২০০২ 
৩। আয়না যুদ্ধ – ২০০৫ করুণা প্রকাশনী
৪। বোবা যুদ্ধ – ২০০৭ অভিযান পাবলিশার্স
৫। সাহিত্যের সেরা গল্প – ২০০৭
৬। আমার সময় আমার গল্প – ২০০৮ পুনশ্চ
৭। সুখ সন্ধানে যাও – ২০০৯ লেখা প্রকাশনী
৮। শ্রেষ্ঠ গল্প – ২০১০ করুণা
৯। নির্বাচিত গল্প – ২০১০
১০। ভেজা তুলোর নৌকা – ২০১৭

কাব্যগ্রন্থ
১। রক্তদেহে অনাস্বার – ১৯৮৭
২। বৃষ্টির নামতা – ১৯৮৮
৩। কবিতা সংগ্রহ – ২০১৩ ছোঁয়া প্রকাশনী

আলোচনা গ্রন্থ
১। শরৎচন্দ্রের দেনাপাওনা – ১৯৯৯
২। বাংলা ছোটগল্পে ব্রাত্যজীবন – ২০০৪
৩। ছোটোগল্প পরিক্রমা – ২০০৫
৪। জনজাগরণের উপন্যাস অরণ্যের অধিকার – ২০০৫
৫। প্রবন্ধ সমীক্ষা – ২০০৬
৬।  বাংলা ছোটগল্পে তত্ত্ব ও গতিপ্রকৃতি – ২০০৯
৭। চেনা মুখ অচেনা পাণ্ডুলিপি – ২০১০
৮। বাংলা ছোটগল্পে বাস্তবতা বোধের বিবর্তন – ২০১৪
৯। অলীক মানুষ উপন্যাসের অন্দর বাহির – ২০১৬
১০। সহজ বাউল – ২০১৭
১১। শরৎচন্দ্রের পল্লীসমাজ – ২০১৮
১২। কথা সাহিত্যের অরূপ মহারূপ – ২০১৮ [ আলোপাত, বাংলাদেশ]

সম্পাদিত গ্রন্থ
১। পথের পাঁচালী – ২০১১ করুণা প্রকাশনী
২। অশনি সংকেত – ২০১২ করুণা প্রকাশনী
৩। বিষাদ সিন্ধু – ২০১২ দেজ পাবলিশিং
৪।  জমিদার দর্পণ – ২০১৫ দেজ পাবলিশিং

এছাড়াও শিশুদের জন্য কয়েকটি বই লিখেছেন।

সাহায্য — কলেজস্ট্রিট পত্রিকা    
আরো পড়ুন :  রবীন্দ্রনাথের প্রথম প্রকাশিত রচনা ও স্বীকৃতির চিঠি