সময়কাল :  ৯৮০ – ১০২০ (আনুমানিক)

রচনা —

১) লোচন (আচার্য আনন্দবর্ধন-এর ‘বৃত্তি’র টীকা)
২) অভিনবভারতী (ভরতের ‘নাট্যশাস্ত্রে’র ভাষ্য)

কাব্যে ধ্বনিবাদের প্রতিষ্ঠাই ছিল মূল ধ্বনিগ্রন্থ রচয়িতার একমাত্র উদ্দেশ্য।আনন্দবর্ধন তাঁর ‘আলোক’-এর [ধ্বন্যালোক] সাহায্যে সে উদ্দেশ্য সিদ্ধ করার প্রয়াস করেছিলেন, কিন্তু সিদ্ধি লাভ করতে পারেন নি। রসধ্বনিবাদ আত্মপ্রতিষ্ঠার জন্য প্রতীক্ষা করছিল এক মহামনীষার, এক অসামান্য প্রতিভার। সেই মনীষা, সেই প্রতিভা আচাৰ্য অভিনবগুপ্ত। প্রাচীন ভারতীয় কাব্য চিন্তা-লোকের উজ্জ্বলতম জ্যোতিষ্ক ইনি। প্রথম জীবনে গুরুগৃহে ইনি ছিলেন “বালবলভীভুজঙ্গ”; উত্তরকালে ধ্বন্যালোকের ‘লোচন’-রচনার সমাপ্তিতে উনি বলেছেন – মীমাংসা ন্যায় ব্যাকরণতত্ত্বজ্ঞদের গুরু আমি প্রবন্ধসেবারস অভিনবগুপ্ত ধ্বনিতত্ত্বরচনা শেষ করলাম।

বাক্যপ্রমাণপদবেদিগুরুঃ প্রবন্ধ-
সেবারসাে ব্যয়চয়দ-ধ্বনিবস্তুবৃত্তিম্‌ ॥

সার্থক অহঙ্কার — বাল্মীকির মতন, জয়দেবের মতন, রবীন্দ্রনাথের মতন।

ভরতমুনির নাট্যশাস্ত্র’-এর সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষ্য অভিনব গুপ্তের ‘অভিনবভারতী’। বাস্তবে ইনি ‘অভিব্যক্তিবাদী’। বিভাব অনুভাব ও ব্যভিচারীর ব্যঞ্জনায় ক্ষণকালের জন্য নির্মলীকৃত ‘চিৎ’-এ অভিব্যক্ত সহৃদয় পাঠকের স্বানন্দই রস— এই হ’ল অভিব্যক্তিবাদের স্থূল এবং সংক্ষিপ্ত পরিচয়। ধ্বন্যালােক-লােচনে রসকে কিভাবে ব্যাখ্যা করেছেন অভিনব গুপ্ত। আগে ‘অভিনবভারতী’ পরে ‘লোচন’।
মূল ধ্বনি-কারিকায় কিছু কিছু ত্রুটি থাকা স্বাভাবিক। কিছু সংশোধন করেছেন মনীষী আনন্দবর্ধন ; বাকীটুকু যথা সম্ভব সেরে নিয়েছেন অভিনবগুপ্ত। আবার আনন্দবর্ধনও মাঝে মাঝে অজ্ঞাতসারে যেটুকু অসামঞ্জস্য ঘটিয়ে ফেলেছেন, অসামান্য প্রজ্ঞাবান অভিনবগুপ্ত সাধ্যমতো তারও সামঞ্জস্য বিধান করেছেন।
আনন্দবর্ধন ‘আলােক’-রচনা একশো বছর পরে রচিত অভিনবগুপ্ত ‘লােচন’। এই সুদীর্ঘ কালের মধ্যে, ভারতের অন্যত্র তো দূরের কথা, ‘ধ্বনি’র জন্মভূমি কাশ্মীরেই কাব্যে ধ্বন্যাত্মবাদ স্বীকৃতি লাভ করে নি। ধ্বনিবাদের জয়যাত্রার পথ প্রশস্ত করলেন অভিনবগুপ্ত। এ জয় অবশ্য সর্বাঙ্গীণও নয়, সর্বভারতীয়ও নয়, তবু বহুব্যাপক।
—————————————————————-    

ঋণ – শ্যামাপদ চক্রবর্তী

One Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *